প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ জুন : রাজ্যের অন্যান জেলার পাশাশাপি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলেছে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা।সোমবার একদিনে এই রাজ্যে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ জন বাসিন্দা।এই ঘটনার ঠিক ৩ দিন আগে অর্থাৎ গত শনিবার বজ্রপাতে পূর্ব বধমানের জামালপুর ব্লকের ৪ জন বাসিন্দা মারা যান। আর এক বাসিন্দা জখম হন।এর পরের দিন ফের বজ্রপাতে জামালপুরের এক নাবালিকা ও কালনা মহকুমার এক বাসিন্দা বজ্রপাতে মারা যান।জামালপুরে এইভাবে বজ্রপাত বৃদ্ধির কি কারণ তা খুঁজে পেতে চাইছে জেলা প্রসাসন।সেই কারণে শেষ পাঁচ বছরে জামালপুরের কোন কোন এলাকায় কত সংখ্যায় বজ্রপাত হয়েছে এবং কতজন মারা গিয়েছেন তার তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে প্রশাসন।একই সঙ্গে জেলা শাসকের নির্দেশে বজ্রপাত সংক্রান্ত বিষয়ে জামালপুরের জনসাধারণকে সচেতন করার প্রচার কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে ।
বজ্রপাত বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন,বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ জলবায়ু ও আবহাওয়াজনিত নেতিবাচক পরিবর্তন। এছাড়াও দূষণের জেরে ভাসমান ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ার প্রভাবেও বজ্রপাতের ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে। মূলত দূষণের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিই নির্দিষ্ট জায়গায় ক্রমবর্ধমান বজ্রপাতকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলেই মত গবেষকদের। একই সঙ্গে তাঁরা মনে করছেন , উষ্ণায়ন ও যথেচ্ছ ভাবে সবুজ ধ্বংসও বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম একটা কারণ ।বিশেষজ্ঞদে মতে,’ দিবাভাগে সৌরতাপ বৃদ্ধির কারণে সীমানা স্তর অত্যধিক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । তার ফলে বায়ুমণ্ডলে তৈরি হওয়া অস্থিরতা থেকেই বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়’।গবেষকরা আরও বলছেন ,তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ৫০ ভাগ বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণ বড় বড় গাছ কেটে ফেলা।কারণ বড়বড় গাছপালা বজ্রনিরোধক হিসেবেও কাজ করে। আর বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হওয়ার পরেও খোলা স্থানে মানুষের কাজ করা এবং বজ্রপাতের বিষয়ে অসচেতনতাও বজ্রপাতে প্রাণহানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মত বিশেষজ্ঞদের ।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানিয়েছেন, “বজ্রপাত নিয়ে জামালপুরে সচেতনতার প্রচার শুরু করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানকার বজ্রপাত সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য-সংগ্রহের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত চাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের পরিবেশ দূষণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে , রাজ্যের ১৬ টি জায়গায় লাইটনিং ডিটেক্টরের মাধ্যমে আগাম বাজ পড়ার সঙ্কেত পাওয়া যায়। জেলাপ্রশাসনের কাছ থেকে তথ্য-সম্বলিত রিপোর্ট মেলার পর জামালপুরে ওই প্রযুক্তি লাগানো যায় কি না তা দেখা হবে । জামালপুর ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক ফাল্গুণী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বজ্রপাত হওয়া এলাকাগুলির তথ্য সংগ্রহ কাজ শুরু হয়ে গেছে।’।