সঙ্গীতা মুখার্জ্জী মণ্ডল, পূর্ব বর্ধমান,৩১ মার্চ : বর্তমান ব্যস্ততার যুগে সপরিবারে ‘হলে’ বসে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র দেখার রেওয়াজ কার্যত উঠে গেছে। এমনকি ম্যাটিনি ‘শো’-তে কলেজ পালিয়ে আসা প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলকে আর দেখা যায়না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবাস্তব, একঘেয়েমি, বস্তাপচা কাহিনী এবং ‘জ্ঞানহারা’ সঙ্গীত ও নৃত্য দর্শকদের মনে বিরক্তি উৎপন্ন করে। ফলে দর্শকের অভাবে বহু হল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রকৃতি শূন্যস্থান পচ্ছন্দ করেনা। একটা শক্তিশালী কাহিনী ও সামাজিক বার্তাকে হাতিয়ার করে সেইস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। এবার স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র তৈরি করে নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিল বর্ধমান মহারাজাধিরাজ উদয়চাঁদ উইমেন্স কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রীরা।
শনিবার কলেজের এনএসএস (ইউনিট-১)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ও কলেজ অডিটোরিয়ামে প্রদর্শিত হয় ছাত্রীদের তৈরি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা। বিচারকদের বিচারে প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কার জেতে কলেজের মাস কমিউনিকেশন বিভাগ এবং তৃতীয় হয়েছে ইংরেজি বিভাগের ছাত্রীদের তৈরি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ট্রফি, শংসাপত্র ও নগদ অর্থ।
এর আগে প্রতিযোগিতার জন্য কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রীরা নিজেদের তৈরি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে জমা দেয়। পরিচালনা, সম্পাদনা, ভয়েস ওভার, চিত্রগ্রহণ, অভিনয় সহ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছাত্রীদের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন উপস্থিত দর্শকরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা মল্লিকা চক্রবর্তী, এনএসএস (ইউনিট-১)-এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা মৌসিম মণ্ডল, মাস কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক ঋষিগোপাল মণ্ডল সহ কলেজের অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক বাপ্পাদিত্য দাঁ।
মৌসিমদেবী বলেন, ‘স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র তৈরিতে যেভাবে সাড়া মিলেছে সেটা সত্যিই অভূতপূর্ব। আশা করা যায় আগামীদিনে এদের হাত ধরে আরও ভাল ভাল স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে যেটা চলচ্চিত্র প্রেমীদের মনের স্বাদ পূরণ করবে।’ অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বাপ্পাদিত্য দাঁ স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র তৈরিতে কলেজের ছাত্রীদের মুন্সিয়ানার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,’মাথায় রাখতে হবে এরা কেউ পেশাদার চলচ্চিত্র নির্দেশক নয়।’ নিজের বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে অন্য বিভাগের ছাত্রীদের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে ঋষিগোপাল বাবু বলেন – আমার বিশ্বাস একদিন রক্তদান, শিক্ষাঙ্গনে যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, থ্যালাসেমিয়া, ধূমপান সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি সচেতনতামূলক স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
প্রসঙ্গত,অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ঋষিগোপাল মণ্ডল। তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সঞ্চালনা অনুষ্ঠানে অন্যমাত্রা এনে দেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের জানিয়েছে যে আগামী দিনে এই ধরনের অনুষ্ঠান আরও বৃহৎ আকারে করা হবে।।