এমন এক সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেঁচে আছি বা দাঁড়িয়ে আছি যেখানে শিক্ষকতা পেশাকে খুব সহজেই, পেশাদারী মূল্যে ও চরিত্রের বিশ্লেষণে বিদ্ধ করা যায় বা ভালো মন্দের তকমা দেওয়া যায়। অভিযোগ ঝুড়ি ঝুড়ি। এই যেমন ধরুন, — শিক্ষক শিক্ষিকারা তো প্রায় বসে বসেই মাইনে নেন। কোথায় আর এমন কিছু কাজ করেন ? এই পেশায় তো শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাজপোশাক নিয়েও সমালোচনা শেষ নেই। যদি কেউ চুড়িদারের সাথে জিনসের প্যান্ট পরেন বা প্লাজো পরেন বা একটু বেশি সাজসজ্জা করেন চোখে মুখে, তাহলেই নাকি ছাত্র/ছাত্রীদের মূল্যবোধ তৈরিতে বাধা হতে পারে। এই পেশায় নিযুক্ত দের রবীন্দ্রসঙ্গীতের নৃত্যে শোভা হয় কিন্তু হিন্দি গানে নয়। কোনো কোনো স্কুলে তো আবার শিক্ষক/শিক্ষিকা দের বসবার ঘরও আলাদা হয়। কারণ উনারা এক সাথে বসলেই সেটা ও শিক্ষালয়ের ও শিক্ষার পক্ষে শোভনীয় নয়। বলেই মনে হয়। এই পেশায় ছড়ি ধরলে অত্যাচার হয় আর না ধরে সামান্য বকা ঝকাতেও টিচার্স কে চরম অপমানিত হতে হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো কারোর শোস্যাল মিডিয়ার লাইফ স্টাইল দেখে ভালো/মন্দের বিচার বিশ্লেষণ হয়ে যায়।
এবার আসা যাক একটু আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কথায়। একেবারেই রাজনৈতিক দিক বাদ দিয়েই বলছি,
১। সাজসজ্জা ও পোষাক নিয়ে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন বহু আগেই। একটা প্রজন্ম টিচার্স দের থেকেই যে শেখে এমন নয়। তারা এমনিতেই শোস্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের দৌলতে অনেক কিছুই শেখে। তাছাড়া কেউ যদি মনে করেন,তিনি অশালীন ভাবে সাজবেন তো,তিনি শাড়ি পরেও তা করতে পারেন। সবটুকুই হলো ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বা রুচি।
২। একজন টিচার্স যদি বাইরে কোনো ভ্রমণের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতে না নেচে হিন্দি গানে নাচেন, আর তার জন্যে যদি তাঁর চরিত্রের উপর বা শিক্ষার উপর প্রশ্ন ওঠে, তাহলে সবার আগে সেই গানটি কে ব্যান্ড করা উচিৎ। কারণ সেই গানে শিক্ষক/শিক্ষিকা না নাচলেও বাকিরা নাচবেন। আর তাতেও হতে পারে সামাজিক অবক্ষয়। আর সর্বোপরি রবীন্দ্রসংগীতে নাচলেই ভালো, রবীন্দ্রসংগীতের বাইরে কোনো গানে কেউ নাচলেই সেটা খারাপ। – একজন ব্যক্তির ইচ্ছের উপরে এই তকমা সাঁটিয়ে দেওয়া কি ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়?
৩। আর শিক্ষক/শিক্ষিকা দের বসবার ঘর আলাদা হলেই ছাত্র/ছাত্রীদের – মানসিকতার মধ্যে যদি দারুণ মূল্যবোধ তৈরি হয়ে যেতো,তাহলে কো এডুকেশন এর উপরেও প্রশ্ন তুলতে হয়?
৪। বাকি রইলো শাস্তি দেওয়া বা না দেওয়া। এ ক্ষেত্রে আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত হলো, মারার প্রয়োজন না রেখেই ছড়ি ধরার গুনাগুন কি হয় তা আমাদের অজানা নয়।
৫। বিদেশে জীবন শৈলীর শিক্ষা ক্লাসরুমের মধ্যে দেওয়া হয়। পড়ার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের বাস্তবিক শিক্ষা ও তাদের দেওয়া হয়। কই সে সব দেশের সমাজে তো টিচার্স এর পোষাক বা নৃত্য পরিবেশনা নিয়ে,ব্যক্তিগত শোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে, খারাপ ভালোর তকমা দেওয়া হয় না।
আমার একটা সাধারণ প্রশ্ন, – সব পেশায় বৈচিত্র রয়েছে। ঠিক/ভুল বা খারাপ বিষয় থাকে। তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিচার্স দের নিয়েই এতো সামাজিক সমালোচনা হয় কেনো ? একজন টিচার্স যদি কোনো যৌনকর্ম করেন বা অসামাজিক বা কারোর পক্ষে চরম ক্ষতিকর কাজ করেন; যা আইনের চোখে দণ্ডনীয়। তা হলে তা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়। তাঁর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হওয়া উচিৎ। কিন্তু একজন টিচার হলেই তাকে কিছু সামাজিক বিধিনিষেধ এর মধ্যে থাকতে হবে। তাহলেই তিনি আদর্শবান হবেন আর তিনি যদি ক্লাসে নাও পড়ান তাহলেও চলবে।
এমন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনটি কি কাম্য নয় ? প্রশ্ন রইল শিক্ষানুরাগী সুধী সমাজ বৃন্দের কাছে ?