এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ মার্চ : বামফ্রন্ট নেতা মোহাম্মদ সেলিম এবং তার দল সিপিএমকে সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক বলে অভিহিত করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ সেলিম যেখানে সংখ্যালঘু অর্থাৎ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা সেখানে গিয়ে লড়েন । তিনি যদি রাজ্যের নেতা বা কলকাতার বাসিন্দার হন তাহলে তিনি কেন ডায়মন্ডহারবারে লড়ছেন না? আমি তো মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে লড়েছি এবং হারিয়েছি । আপনি তো মীনাক্ষীকে পাঠিয়েছিলেন ভোট কেটে মমতা ব্যানার্জিকে জেতানোর জন্য । মোহাম্মদ সেলিম আর সিপিএম হল সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক । যেখানে মুসলমান আছে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায় । তবে এবারে মুসলমানরা ওদের ভোট দেবে না, নিশ্চিন্ত থাকুন।’
আজ বৃহস্পতিবার যাদবপুরের রানীকুঠীতে বিজয় সংকল্প সভায় যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । যাদবপুরের দলীয় প্রার্থী ডঃ অনির্বাণ গাঙ্গুলির সমর্থনে একটি মিছিলে তিনি অংশ নেন । পরে জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় শুভেন্দু তৃণমূল সিপিএমের মধ্যে আর আঁতাতের অভিযোগ তোলেন । শুভেন্দু বলেন, ‘সিপিএম স্বাধীনতার পরে বিধানসভায় একটা সদস্য পাঠাতে পারেনি । সিপিএমের কাজটা কি বলুন তো? ২০২১ সালে চোরেদের সরকার, নারী নির্যাতনকারী সরকার, অত্যাচারী সরকার , লুট করা সরকারকে আনার জন্য সিপিএমের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ।
এই যাদবপুরের খেঁকশিয়াল বা নকশালরা কি বলেছিল ? ফেকু আর মাকুরা মিলে সব সভাতে গিয়ে বলেছিল ‘নো ভোট টু বিজেপি’,’নো ভোট টু মোদী’ । এরা কেউ ‘নো ভোট টু তৃণমূল’ বলেনি । আমরা বরঞ্চ সব সভাতে গিয়ে ‘নো ভোট টু মমতা’ বলি ।’
তিনি আরও বলেন,’সিপিএম এ রাজ্যের ৫০ থেকে ৬০ টি আসনে সনাতনী,নমঃশূদ্র, উদ্বাস্তু ও শিক্ষিত সমাজের ভোট কেটে তৃণমূলকে পিছনের দরজা দিয়ে এনেছিল । এবারেও এদের বক্তব্য এদের প্রচার দেখবেন,এদের কোন বয়স্ক নেতা নির্বাচনে লড়ছেন না । এদের প্রধান প্রধান নেতা মোহাম্মদ সেলিম সাহেব সব সময় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে ভোটে লড়েন । এর আগে রায়গঞ্জে লড়েছেন এবং হেরেছেন । এবারেও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে গিয়ে লড়ছেন ।’ সিপিএমকে কার যত তুলোধোনা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘যে সিপিএম ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে, সেই সিপিএমের নেতা মুর্শিদাবাদের ভোটে লড়তে যায় । মোহাম্মদ সেলিম উত্তর কলকাতার সাংসদ ছিলেন ২০০৪ সালে । কেন লড়লেন না? দক্ষিণ কলকাতায় লড়লেন না কেন? যদি মমতা ব্যানার্জিকে উৎখাত করতে চান তাহলে তার এলাকা দক্ষিণ কলকাতায় লড়লেন না কেন? কারণ মুর্শিদাবাদের ৭২ শতাংশ সংখ্যালঘু বাস করে । বিজেপি সাম্প্রদায়িক নয়, প্রকৃত সাম্প্রদায়িক হলো সিপিএম । সংখ্যালঘু দেখে দেখে নির্বাচনে লড়তে গেছে ।’
এরপর তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘আর তৃণমূল তো খোলা তোষণ করে ৷ রেড রোডে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লজ্জার মাথা খেয়ে মমতা ব্যানার্জি যায় । আমরা যখন এখানে সভা করছি তিনি তখন দুপুরবেলায় ভাত শরবৎ, ডিম সিদ্ধ, আরো অনেক কিছু খেয়ে এখন ভোটের জন্য ইফতার পার্টি করছেন ।এরই নাম হলো তোষন ।’
রাজ্যের মুসলিম ভোটারদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘সংখ্যালঘুরা কি কি পেয়েছেন? ২০২১ সালে তো দল বেঁধে ভোট দিয়েছিলেন । ৯১ শতাংশ ভোট দিয়েছিলেন । কি পেয়েছেন? আমতায় আনিস খানকে, মমতা ব্যানার্জির পুলিশ তিন তলার ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে তাকে মেরে দিয়েছে । রামপুরহাটের বগডুই, সংখ্যালঘু মহিলা,শিশুদের পুড়িয়ে মেরেছে । সম্প্রতি গার্ডেনরিচে ৫ তলা বেআইনি পাকা বাড়ি ভেঙে পড়ে ১২ জন সংখ্যালঘু মারা গেল । আপনাদেরকে মমতা ব্যানার্জি মনে করে তেজপাতা । তরকারিতে লাগে কিন্তু খাওয়া যাবেনা । তাই দয়া করে এবারে ওই ভুলটি আর করবেন না । আপনারা নরেন্দ্র নরেন্দ্র মোদিজীর প্রার্থীকে ভোট দিন ।’
এদিকে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন সংক্রান্ত মামলায় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । শুধু মহুয়া নয়, ডাক পড়েছে ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিরও । আগামী ২৮ মার্চ অর্থাত্ বৃহস্পতিবারই হাজিরা দিতে বলা হয়েছে মহুয়াকে। তবে তিনি নির্বাচনী প্রচার ছেড়ে হাজিরা দেবেন কিনা তা স্পষ্ট নয় । এ বিষয়ে সাংবাদিকরা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেজরিওয়ালকে ১৭ বার ডেকেও যায়নি এবং তার পরিণতি আমরা দেখলাম । এবারে মহুয়া মিত্রের পরিনতির জন্য আমরা আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি ।’ রাজ্যের বিভিন্ন চিটফান্ডগুলির টাকা ফেরানোর বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’ভাইপোর দুটো বাড়ির ট্যাগ করেছে, যেদিন অক্সান হবে, আমার কাছে দুটো লোক রেডি করা আছে,আমরা ওই দুটো বাড়ি নেব এবং ওখানে রাজ্যজুড়ে যত বিজেপি কর্মীকে পিসি ভাইপোরা শহীদ করেছেন, ২০০ এর বেশি বিজেপি কর্মী, ওই দুটো বাড়িতে ওই সমস্ত বিজেপি কর্মীদের পরিবারের জন্য অনাথ আশ্রম করব ।’
এদিন তিনি দাবি করেন যে নির্বাচনী খরচার জন্য ডিয়ার লটারি কর্তৃপক্ষ সাড়ে চারশো কোটি টাকা দিয়েছে । দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস ইস্যুতে তৃণমূলকে কার্যত তুলোধোনা করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস টেস্টেড এবং রিজেক্টেড । সিপিএম টেস্টেড এন্ড রিজেক্টেড । টিএমসি অলরেডি টেস্টেড,শুধু ডেজ এন্ড নাম্বারের অপেক্ষা এবং উডবি রিজেকটেড । এদের সময় হয়ে গেছে এদের সবাই চিনে ফেলেছে মানুষ বুঝে গেছে এরা কি যন্ত্র ।’
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আপনারা যান যে তালিবান এর মত এ দেশে শাসক আসুক? আপনার কি চান এই দেশটা ইউক্রেন হয়ে যাক? তাহলে নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় নিয়ে আসুন ।’ এদিন শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন যে এবারের লোকসভা নির্বাচনে নীরব বিল্পব হবে ।।