এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৪ মার্চ : অযোধ্যায় শ্রীরাম মন্দির উদ্বোধনের পর সবথেকে বেশি প্রতিবাদ করেছিল বাংলাদেশের মুসলিমরা । রাম মন্দির ভেঙে ফের বাবরি মসজিদ নির্মাণের ডাক দিয়েছিল তারা । এবার এক খোদ বাংলাদেশেই মন্দিরের জায়গা জোর করে দখল করে মসজিদ নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অভিযোগ উঠল । বাংলাদেশের দিনাজপুরের কাহারোলে ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা চলছে । অভিযোগ যে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এই মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। কান্তনগর গ্রামে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমিতে মসজিদ নির্মাণের ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনাজপুর-১ নির্বাচনী ক্ষেত্রের বর্তমান সাংসদ জাকারিয়া জাকা এই কাজে সহযোগিতা করছেন। গত পয়লা মার্চ সবকিছু জেনেশুনেও মসজিদ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তিনি।এই নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ। রণজিৎ কুমার সিংহ সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘কান্তনগর মৌজায় কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদটি নির্মাণ হচ্ছে। অথচ জমির কোনো রেকর্ড তাদের নামে নেই। খবর নিয়ে দেখেছি, শুক্রবার নির্মাণকাজ হয়নি। তবে রাতের অন্ধকারে কাজ করলে কে ঠেকাবে ?’
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বলছে,অভিযোগের পর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ আমিনুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,’তদন্ত চলছে । তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে মসজিদ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছি । উভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত হবে ।’ তবে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ যে প্রশাসন আশ্বাস দিলেও মসজিদের নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সুমলমানরা দাবি করেছে যে এই জমির মালিকানা কান্তনগর গ্রাম জামে মসজিদের নামে রয়েছে । মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস সালামের দাবি যে ‘এখানে আগে থেকেই কাঁচা মসজিদ ছিল। এখন ২৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলে তিনতলার ভিত দিয়ে সমজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে এই জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। সে সময় মামলার আদেশে উভয় পক্ষকে আপস করে নেওয়ার জন্য বলা হয়। সেই সূত্রে গত ১৯৭৬ সালের ১৩ জুন থেকে আপসনামা মূলে ৮ শতাংশ জমির মালিক মসজিদ।’
একই দাবি করেছেন সাংসদ জাকারিয়া জাকা । তিনি বলেন, ‘শুনেছি ৭৫ বছর ধরে ওই এলাকায় মসজিদ রয়েছে। নতুন করে সমজিদের ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি দেবোত্তর সম্পত্তি বলে পরে জানতে পেরেছি। এজন্য মসজিদ কমিটির দাবি করা এই সম্পত্তি বৈধ কি না, আমার জানা নেই। তারা দাবি করছে, জেলা প্রশাসন থেকে কাগজপত্র করা হয়েছে। এই কাগজপত্র সঠিক কি না, আমি জানি না।’
যদিও গত ১৩ মার্চ রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘জেলার কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মৌজায় সিএস ২ নম্বর খতিয়ানটি শ্রীশ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ পক্ষে সেবাইত অনারেবল মহারাজা জগদীশ নাথ রায় নামে প্রচারিত। ওই খতিয়ানে কান্তজিউ বিগ্রহর নামে ৯৪.০৭ একর জমি রয়েছে। এসএ ০৫ নম্বর খতিয়ানে দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের পক্ষে জিম্মাদার জেলা প্রশাসক ১৯টি দাগে ৬২.৪৬ একর জমি রয়েছে। বাংলা ১৪৩০ সন পর্যন্ত জমির খাজনা হালনাগাদ রয়েছে। গত ১০ মার্চ জানতে পারেন যে, কান্তনগর মৌজার ১৬নং দাগে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তির ওপর একটি পাকা মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুনে গত ১১ মার্চ নির্মাণাধীন মসজিদের জায়গাটি পরিদর্শন করি, দেখি মসজিদটি রাজ দেবোত্তর এস্টেটের কান্তনগর মৌজার এসএ ৫ নম্বর খতিয়ানের ১৬ নম্বর দাগের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে।’ লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয় যে ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হকের কাছে কীভাবে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করছেন—জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯৭৬ সালে ডিসি দিনাজপুর ওই জমি তাদের দিয়েছেন। তার কাছে দলিল দেখতে চাইলে তিনি একটি হাতে লেখা তিন পৃষ্ঠার আপসনামার ফোটোকপি দেন। এটি কোনো রেজিস্ট্রিকৃত জমির দলিল নয়। ওই কাগজে মালিকানা হস্তান্তরের কোনো কথা উল্লেখ নেই। আপসনামাটি ভুয়া ও মনগড়া ।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালের ৫১ডিএলআর বলা হয়েছে, দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়,ওই স্থানটি সময়ের জন্য দেবোত্তর সম্পত্তি। রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তিতে অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করায় এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।’
এদিকে পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরের দেবোত্তর ভূমিতে অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। মন্দিরের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন পরিষদের নেতারা।
মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, পুরকীর্তি সমৃদ্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান ঐতিহাসিক এই কান্তজিউ মন্দির। মন্দিরের বিশাল জমি দীর্ঘদিন ধরে বেহাত পড়ে আছে। এই সুযোগে একটি চক্র আগে থেকেই টিনের চালা দিয়ে মসজিদ করে নামাজ পড়ছিল । এখন সেখানে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটি গোষ্ঠী এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের ।।