এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,০৬ জুন : সন্ধ্যা হলেই বাড়ির টালির চালে পড়ছে মুড়ি মুড়কির মত ঢিল । কিন্তু খোঁজাখুঁজি করেও কারোর সন্ধান মিলছে না । কখন কখনও আবার জামা কাপড়ে ও আসবাবপত্রে আচমকা আগুন ধরে যাচ্ছে । অথবা নুপুর পড়ে নাচার মত শব্দ ভেসে আসছে পাশের তালাবন্ধ ঘর থেকে । এমনকি দরিদ্র ঘরে যে’টুকু সোনার গহনা ছিল সেগুলো পর্যন্ত গায়েব হয়ে যাচ্ছে । এসবই ভুতের কারসাজি ভেবে শেষ পর্যন্ত বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আত্মীয়বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন হুগলী জেলার বলাগড় থানার কূলেপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিমাই ধারার পরিবারের লোকজন । নিমাইবাবুদের দাবি,তাঁদের বাড়িতে আস্তানা গেড়েছে অশুভ আত্মা । তবে এই দাবি মানতে চাননি স্থানীয় বাসিন্দারা । স্থানীয়দের বক্তব্য, বাকি সব ভুতুড়ে কারবার বলে মনে হলেও গহনা উধাও হয়ে যাওয়ার পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে । পুলিশ তদন্ত করলেই সব সত্য সামনে আসবে । যদিও উপদ্রুত পরিবার এনিয়ে থানায় কোনও অভিযোগই দায়ের করেনি বলে জানা গেছে ।
বলাগড় থানার কূলেপাড়ার বাসিন্দা নিমাই ধারা শ্রমিকের কাজ করেন । বাড়িতে রয়েছে নিমাইবাবুর মা, স্ত্রী রুবিদেবী ও বছর দেড়েকের এক ছেলে ও এক কিশোরী কন্যা । একটি পাকা ঘরের পাশে ইঁটের দেওয়াল টালির ছাউনি দেওয়া আরও দুটি ঘর রয়েছে নিমাইবাবুদের । বিগত ৫ মাস ধরে নিজের বাড়ি ছেড়ে তাঁরা পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার মহকুমার পূর্ব সাতগাছিয়া গ্রামে নিমাইবাবুর এক বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ।
রুবিদেবী বলেন, ‘অন্ধকার নামলেই আমাদের বাড়িতে বিভিন্ন ভৌতিক ঘটনা ঘটে । আমার কাপড়ে ৫-৬ বার আচমকা আগুন ধরে গিয়েছিল । আমার ছেলে ঘরের ভিতরে খাটে শুয়ে থাকার সময় খাটের তলায় হঠাৎ আগুন ধরে যায় । আমার নজরে পড়ে যাওয়ায় ছেলেকে কোনও রকমে ঘর থেকে বের করে আনি । একদিন হঠাৎ আমার গলায় একটা দড়ির ফাঁস লেগে যায় । আমার শ্বাশুড়ি ফাঁসটা খুলে দিলে বেঁচে যাই । না হলে সেদিন মরেই যেতাম ।
তিনি বলেন, ‘একদিন সন্ধ্যায় আমি বাড়িতে একাই ছিলাম । তখন পাশের তালাবন্ধ ঘর থেকে কারোর নুপুর পড়ে নাচার আওয়াজ শুনতে পাই । ভয়ে আমি ওই ঘর দিয়ে যাইনি । আমার দু’জোড়া সোনার কানের দুল ও আমার শাশুটির সোনার গহনা পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে । এছাড়া সন্ধ্যা হলেই বাড়ির চালে মুড়িমুড়কির মত ঢিল তো পড়েই, তার উপর বাড়ির পাশে গাছ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ার আওয়াজও আকছার শুনতে পাওয়া যায় ।’
রুবিদেবীর কথায়, ‘এই ধরনের ভৌতিক কান্ডকারখানা দেখে আমার মেয়ে অনেক দিন আগেই তার পিসির বাড়ি চলে গেছে । আমরাও বিগত ৫-৬ মাস ধরে আত্মীয়দের বাড়িতে কাটাতে বাধ্য হচ্ছি । কবে বাড়ি ফিরতে পারবো জানি না ।’
জানা গেছে, এদিকে ওই পরিবারটি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরে আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যেও ভুতের ভয় কাজ করতে শুরু করেছে । সন্ধ্যা হলেই কেউই পারতপক্ষে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না । যদিও এই ঘটনাটি কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয়দের একাংশ । তাঁদের দাবি,বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করুক পুলিশ । পাশাপাশি কুসংস্কার দুর করতে এগিয়ে আসুক বিজ্ঞানমঞ্চও ।।