বসন্ত মানে কোকিলের কুহুতান, ফাগুনী হাওয়া। শিমুল,পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া টুকটুকে লাল রঙে সেজে থাকা। গাছে গাছে নতুন পত্রপল্লব ও অম্র মুকুলে ভরে থাকা। হলুদ গাঁদা ফুলে গুনগুনিয়ে ভ্রমরের খেলা। কি মধুর ঋতু বদলের প্রকৃতির অপরূপ সাজ।
আঁকাবাঁকা মেঠো পথে কত নাম না জানা শতফুল ফুটে থাকা। মাঠ ভরা সরষে ও সূর্যমুখী ফুল হাওয়ায় দোল খাওয়া। রাখালিয়ার বাঁশির মেঠো সুর। গায়ের বধু’ পরনে তাঁতের শাড়ি, আলতা রাঙা নূপুর পায়ে কলসি কাঁখে নদীর ঘাটে হেঁটে চলা।
তপ্ত রোদে আমগাছের ছায়াতল দিয়ে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাওয়া। কত অম্র মুকুল, শুকনো পাতা ঝরে পড়তো গায়ের উপর। পায়ের নিচে মচমচ শব্দ করে উঠতো শুকনো পাতাগুলো। কখনো হঠাৎ দমকা হাওয়া ধুলোর পথের উপরে স্রোতের পাকের মত ঘূর্ণি করে ধুলো উড়িয়ে দিত চোখে মুখে।
ছুটির দিনগুলোতে, কলা গাছের ভেলা বানিয়ে নতুন জলে ভেলা ভাসানো। আর দল বেঁধে খালে নাইতে নামা। পড়ন্ত বেলায় ছোট বড় ভাই বোন মিলেমিশে ঘুড়ি নিয়ে ছুটে বেড়ানো মাঠে-ঘাটে। আবার কখনো বড়দের সাথে আড্ডা জমিয়ে কলাই ক্ষেতে কলাই শাঁক তোলা। অপার ভাললাগা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় রূপ মনের ভেতরটা আনন্দে ভরিয়ে তুলত।
সেই সব মধুর বসন্তের দিনগুলো বড্ড অচেনা হয়ে গেছে। এখন দেখতে পাই শহরের বড় বড় অট্টালিকা। পিচঢালা রাজপথ। অলিতে গলিতে দিন-রাত ছুটে চলে কত গাড়ি। কোকিলের কুহুতানের পরিবর্তে শুনতে পাই গাড়ির হর্ন। বাতাসে ফুলের মিষ্টি মধুর সুবাসের পরিবর্তে ভেসে আসে বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত কালো ধোয়া।
এখন বসন্তের আগমনে তরুণ-তরুণীরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে সেজেগুজে হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় পার্কে, বিশ্ববিদ্যালয় বা বইমেলায়। ফুচকা ও ঘুগনির আড্ডায় মেতে থাকে। আর মুঠোফোনে হাজার হাজার ছবি তোলে।
কর্মব্যস্ত জীবনে,শত কাজের ফাঁকেও কখন যেন আমরা বসন্তের উল্লাসে মেতে উঠি জানতেই পারি না। বসন্তের ফাগুনী হাওয়া যেন ছুঁয়ে দিয়ে যায় প্রকৃতিকে এক নতুন সাজে। বসন্ত চির নতুন! তাই আবেগময় ভালোবাসা নিয়ে বারবার ফিরে আসে পৃথিবীর বুকে।।