এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ মার্চ : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে একটি বড় আপডেট বেরিয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আজ সোমবার রাতে সিএএ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে । কেন্দ্র সরকার রাত থেকেই দেশ জুড়ে সিএএ কার্যকর করতে বলে খবর । কেন্দ্র সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর গোটা দেশ জুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হয়ে যাবে । তার আগে সন্ধ্যের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইটে যাবতীয় নিয়ম কানুন জারি করা হতে পারে।
এদিকে আজ বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ‘কোনও বৈষম্য মানবেন না’ । মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন যে যারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস করেছে তারা ইনভেলিড হয়ে যাবে না তো ?’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সিএএ লাগু করার প্রয়োজন হল কেন? সিএএ আইনে আসলে কি বলা হয়েছে তা দেখার জন্য আমরা এতদিন অপেক্ষা করছিলাম । এখনো পর্যন্ত আমরা কোন নোটিফিকেশন পাইনি । নোটিফিকেশনে কি আছে ? যে রুলস করেছে সেই রুলসে কি বলা আছে? কাগজ হাতে পাওয়ার পর যদি দেখি কোন বৈষম্য হচ্ছে তাহলে তা আমরা মানবো না। কোন বৈষম্য আমরা মানি না ।’
তিনি আরও বলেন,’যদি সিএএ করে বলে আপনারা নাগরিক, তাহলে এতদিন কি তারা নাগরিক ছিল না? সেই কারণেই কি মতুয়া এবং নমঃশূদ্রদের আধার কার্ড বাতিল করার চক্রান্ত হয়েছিল? কেন তাদের আধার কার্ড বাতিল করা হচ্ছিল? তার মানে নতুন কিছু করবে পুরনোটার কোন গুরুত্ব থাকবে না।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’আমরা মনে করি আমরা সবাই নাগরিক । আজকে কেউ চাকরি-বাকরি করছেন, কেউ পড়াশোনা করছে, কেউ জমি জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসতি স্থাপন করেছেন । তারমানে সেগুলি কি ভ্যালিড নয়? আগে তারা যে সুযোগগুলো পেতেন সেগুলো সব অবৈধ হয়ে যাবে না তো? তাদের ভোটেই তো সাংসদ, বিধায়ক, পুরসভার ও পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হয়েছে । তাদের ভোটের কি কোন মূল্য নেই?’
পাশাপাশি লোকসভা ভোটের আগে সিএএ লাগু করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘ভোটের আগের নাগরিকত্ব নিয়ে কেন নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে? সিএএ ও এনআরসি লাগু করে যদি নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে আমরা চুপ থাকবো না । এনআরসি তো আমরা মানি না আর সি এ এ লাগু করে কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে তা আমরা হতে দেব না । কোন বৈষম্য হলে আমরা তা মানবো না ।’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন ‘কাগজ’ হাতে পাওয়ার পর আগামীকাল বিস্তারিত জানাবেন ।
সিএএ আইনটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সংসদ দ্বারা পাস হয়েছিল, এটি রাষ্ট্রপতির সম্মতিও পেয়েছে, যদিও এটি তখন থেকেই মুলতুবি রয়েছে কারন । উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ দেশের কিছু অংশে ব্যাপক হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছিল । ক্রমশ সেই বিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ৷ কিন্তু এখন এই আইন দেশে লাগু হলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় নিপিড়নের শিকার হয়ে দেশত্যাগী মানুষ ভারতে তাদের ‘স্থায়ী বাড়ি’ খুঁজে পাবে কারণ তারা ভারতের সরকারী নাগরিকত্ব পেতে চলেছে।
সিএএ হল একটি আইন যা ৩ টি দেশ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ছয়টি সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ এবং পার্সিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করে।পার্লামেন্টে সিএএ আইন পাশ হওয়ার পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার নির্বাচনী বক্তৃতায় একাধিকবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেছেন । এখন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তা কার্যকর করার ঘোষণা করেছেন তিনি।
ওই তিন দেশের ৬ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যারা ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে চায় তাদের সিএএ ওয়েব পোর্টালে আবেদন করতে হবে এবং সরকারী যাচাই-বাছাইয়ের পরে তাদের আইনি ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে, এই সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য কোনও নথি সরবরাহ করতে হবে না বলে জানা গেছে ।।