এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,১১ মার্চ : প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা বিহারের দারভাঙ্গার প্রাক্তন সাংসদ কীর্তি আজাদকে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে প্রার্থী করেছেন মমতা ব্যানার্জি । তৃণমূল সুপ্রিমোর এই সিদ্ধান্তে কার্যত চমকে গেছে এলাকার বাসিন্দারা । কারন একজন ক্রিকেটের হিসাবে কীর্তি আজাদের তেমন ক্যারিশমাটিক ইমেজ নেই,রাজনীতিবিদ হিসাবেও তার নাম এলাকার সিংহভাগ মানুষই জানেন না । তাহলে একটা হিন্দিভাষী রাজ্যের এমন এক ব্যক্তিকে মমতা ব্যানার্জি কেন প্রার্থী হিসাবে বেছে নিলেন, তা নিয়ে এখন থেকেই প্রশ্ন উঠছে । বর্তমানে বর্ধমান- দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রটি বিজেপির দখলে এবং বিদায়ী সাংসদ হলেন এস এস আলুওয়ালিয়া । এলাকায় কানাঘুঁষা চলছে যে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই মমতা ব্যানার্জি একদম আনকোরা এক প্রার্থীকে এই কেন্দ্রে বেছে নিয়েছেন !
যাইহোক,এই পরিস্থিতির মাঝেই নতুন একটি বিতর্ক উসকে দিয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের সর্বভারতীয় ইনচার্জ অমিত মালব্য । তাঁর অভিযোগ যে কীর্তি আজাদের বাবা ভাগবত ঝা আজাদ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় ভাগলপুর থেকে ৫০,০০০ হিন্দু বাঙালিকে ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছিল । শুধু তাইই নয়, ভাগবত ঝা আজাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ভাগলপুরে নিজের বাড়ি থেকে একটি বাঙালি হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ তাঁর । সংবাদপত্র টেলিগ্রাফের ২০০৫ সালের একটি প্রতিবেদনের লিঙ্ক শেয়ার করে অমিত মালব্য লিখেছেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাগবত ঝা আজাদের ছেলে কীর্তি আজাদকে টিকিট দিয়েছেন, যার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ভাগলপুরে নিজের বাড়ি থেকে একটি বাঙালি হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করেছিল,৫০,০০০ বাঙালির দুঃখজনক দেশত্যাগের সূত্রপাত করেছিল, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করেছিল ।
পাপরী বোস-রায়কে তার নির্বাচনী এলাকা ভাগলপুরে কীর্তি আজাদের বাবা ভগবত ঝা আজাদের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী এবং অনুচরদের দ্বারা অপহরণ করা হয়েছিল। ভগবত ঝা তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কিন্তু ওই বাঙালি মেয়েকে খুঁজে বের করতে কিছুই করেননি । উল্টো তিনি মেয়েটিকে অপহরণকারী ও বাঙালি হিন্দুদের নির্যাতনকারীদের রক্ষা ও সাহায্য করেছিলেন । বাঙালির অভিশাপ আজাদ বংশকে বিহারের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, তারপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে এমন এক নির্মম ব্যক্তির পুত্রকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে,ধিক্কার আপনাকে । তিনি আরও লিখেছেন,’এটি সন্দেশখালীতে হিন্দুদের নির্যাতনকারী শেখ শাহজাহানকে রক্ষা করার মতোই ঘটনা ।’
অমিত মালব্যর শেয়ার করা টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে একজন বাঙালি মেয়েকে অপহরণের ঘটনার কথা উল্লেখ আছে । ২০০৫ সালের ২২ আগস্ট প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,’এই প্রাচীন রেশম শহরে আশাহীন সংখ্যালঘু বাঙালিরা আজ সরকারি কর্মচারীদের উদাসীনতা এবং হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছে। ১৭ বছর আগে ১৯৮৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ভাগবত ঝা আজাদের ঘনিষ্ঠ লোকেরা সম্প্রদায়ের একটি তরুণীকে অপহরণ করার পরে তারা রাস্তায় নেমেছিল। প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো একটি বাংলা মাধ্যম স্কুলকে অবহেলার প্রতিবাদে আজ তারা আবারও বিহার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএ) নেতৃত্বে মিছিল বের করেছে।’
প্রতিবেদনের শেষের দিকে ভাগলপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের তৎকালীন ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেবাশিস ব্যানার্জির বক্তব্য দেওয়া আছে । তিনি টেলিগ্রাফকে বলেছিলেন,’গত তিন দশকে ভাগলপুর থেকে ৫০,০০০-এরও বেশি বাঙালি স্থানান্তরিত হতে হয়েছে৷ ভাগলপুরে বাঙালি জনসংখ্যা আজ প্রায় ৪,০০০-৫,০০০ ।’
উল্লেখ্য,কীর্তি আজাদ ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সালে বিজেপিতে ছিলেন । ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিহারের দারভাঙ্গা থেকে নির্বাচিতও হন । ২০১৯ সালে তিনি দলত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন । ফের দলত্যাগ ২০২১ সালে, কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে । মমতা ব্যানার্জি তাকে গোয়া তৃণমূল কংগ্রেসের ইনচার্জ করেন । এবারে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে তাকে টিকিট দিল তৃণমূল । তবে ২০১৪ সালের লোকসভার পর কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয়ী হওয়ার নজির নেই কীর্তি আজাদের । এখন দেখার যে ২০২৪ সালে তার জয়ের খরা কাটে কিনা ।।