প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান০৪ জুন : করোনা কেড়ে নেয় তাঁর মায়ের প্রাণ । মা করোনা আক্রান্ত হওয়ার সময়ে বর্ধমানের বাবুরবাগ নিবাসী শেখ রবিউল হক নিজের চোখে দেখেছিলেন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে কালোবাজারি। সেই ধিক্কারে রিক্সা চালক রবিউল হক অসহায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিজের ভ্যানরিক্সায় সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।সত্তরোর্ধ্ব করোনা যোদ্ধা রবিউলের এই মহতি কর্মকাণ্ড সাড়া ফেলে দিয়েছে শহর বর্ধমানের বাসিন্দা মহলে ।
বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের বাসিন্দা সেখ রবিউল হক পেশায় রিক্সাচালক। রিক্সা চালিয়ে যে টুকু উপার্জন হয় তা দিয়েই তাঁর সংসার চলে ।মাসখানেক আগে তাঁর পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধা মহিলা করোনা আক্রান্ত হন। তা জানার পরেই বৃদ্ধাকে বাড়িতে ফেলে রেখেই পরিবার সদস্যরা পালিয়ে যান।পরে বাড়িতেই মারা যান ওই বৃদ্ধা ।এই ঘটনা ব্যাথিত করেছিল রবিউলকে । এর কিছুদিন পর ’রোজার’ সময় রবিউলের বৃদ্ধা মাও করোনা আক্রান্ত হন।তিনি তাঁর মাকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন।সামান্য রাস্তা যাওয়ার জন্যে সেই সময়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক তাঁর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা চায় ।অর্থিক সামর্থ না থাকায় রবিউল আর তাঁর বৃদ্ধা মায়ের জন্যে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে পারেন নি । বৃদ্ধা মাকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এরপর তিনি একটি ভ্যান রিক্সো যোগাড়ের চেষ্টা করেন । ভ্যান রিক্সোওয়ালা ভাড়া চান দেড় হাজার টাকা।শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে বৃদ্ধা মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান রবিউল । কিন্তু তিনি মাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারেন নি । এইসব ঘটনা নাড়িয়ে দেয় রিক্সা চালক রবিউলকে । তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন অসহায় ’করোনা’ আক্রান্ত রোগীদের বিনা ভাড়ায় তিনি হাসপাতালে পৌছে দেবেন ।
রবিউল হক এদিন বলেন ,করোনা আক্রান্তদের বিনা ভাড়ায় হাসপাতালে পৌছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিনি দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। নিজের রিক্সাটিকে তিনি ভ্যান রিক্সায় পরিণত করেন । বিনা ভাড়ায় করোনা রোগীদের পরিবহনের বিষয়টি জনগনকে জানাতে তিনি তাঁর ভ্যান রিক্সার সামনে পোষ্টার ঝুলিয়ে দেন। তাতে তিনি নিজের ফোন নম্বারও উল্লেখ করে রাখেন। সেই ভ্যান রিক্সো নিয়ে তিনি বর্ধমান শহরের নার্স কোয়ার্টার মোড়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকেন ।ডাক পেলেই পরিচিতদের দেওয়া পিপিই কিট পড়ে তিনি হাসপাতালে রোগীকে পৌছে দেওয়ার জন্যে ছুটে যাচ্ছেন । সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরানো অবস্থা থাকলেও রবিউল তাঁর নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল রয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য,“যেসব গাড়ি চালকরা করোনা আক্রান্তদের শোষণ করছেন তা মেনে নেওয়া যায় না । তাই তিনি ওইসব অ্যাম্বুলেন্স চালকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই নিজের রিক্সাকে ভ্যান রিক্সায় পরিণত করে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন । শরীরে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে ততক্ষণ তিনি এই কাজ করে যাবেন ।’।