এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০২ মার্চ : অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নাম নিয়ে সাংবাদিকতা করতেন এক তরুনী । জীবনযাপন করতেন হিন্দুদের মতই । করতেন পূজার্চনাও । একাই থাকতেন বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার বেইলি রোডের একটি আবাসনে । কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিট নাগাদ ওই আবাসনে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা । মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয় ৪৬ জনের । মৃতদের তালিকায় রয়েছেন ওই সাংবাদিক তরুনীও । তাঁর মৃতদেহ রাখা ছিল ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাকি মৃতদেহগুলি পরিবারের হাতে তুলে দিলেও ওই সাংবাদিক তরুনীর ধর্মপরিচয় নিয়ে টানাপোড়েনের জেরে দেহটি মর্গেই ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছিল । একপক্ষ দাবি করেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী একজন হিন্দু এবং হিন্দুরীতি মেনেই তার সৎকার করতে হবে । অন্যপক্ষ তরুনীকে মুসলিম বলে দাবি করেন । অবশেষে সাংবাদিক তরুনীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট,জাতীয় শংসাপত্র পরীক্ষা করার পর মৃতদেহটা মৃতার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জব্বার।
জানা গেছে,শুক্রবার সাংবাদিক তরুনীর মৃতদেহ নিতে এসেছিলেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বাসিন্দা সবুজ শেখ নামে এক ব্যক্তি । তিনি নিজেকে তরুনীর বাবা হিসাবে পরিচয় দিয়ে বলেন যে তার মেয়ের নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নয়, বরঞ্চ তার নাম বৃষ্টি খাতুন । এরপরেই শুরু হয় বিপত্তি । তার এই দাবি কিছুতেই মানতে চাননি অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর সহকর্মী ও পরিচিতরা । তারা দাবি করেন যে অভিশ্রুতি সনাতন ধর্মের অনুসারী । নিয়মিত পূজার্চনাও করতেন অভিশ্রুতি । তারা সবুজ শেখের হাতে মৃতদেহ তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করেন । কিন্তু হিন্দুদের এই দাবি কোনোভাবেই মানতে নারাজ বাবা পরিচয় দেওয়া মুসলিম ধর্মাবলম্বী সবুজ শেখ । শুরু হয় টানটান উত্তেজনা ।
জানা গেছে,এরপর সবুজ শেখ ও মৃতার আত্মীয় স্বজনরা তরুনীর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাকে বৃষ্টি খাতুন বলে দাবি করেন, ঠিক তখন সনাতন ধর্মের কয়েকজন তার ফেসবুক আইডি ও সিভি দেখাচ্ছিলেন সাংবাদিকদের। তারা দাবি তোলেন, পূজার্চনা করা অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল বাবা- মাকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হোক।
শেষে মৃতা তরুনীর পরিচয় নিশ্চিত করতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । আর তখনই মৃতা সাংবাদিকদের আসল পরিচয় জানতে পারা যায় বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জব্বার। তিনি জানান, ফিঙ্গারপ্রিন্ট অনুযায়ী জানা যায়, এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন রয়েছে । বাবার নাম সবুজ শেখ আর মায়ের নাম বিউটি বেগম।এনআইডি অনুযায়ী, ওই সাংবাদিকের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম গ্রামে। এনআইডির তথ্যানুযায়ী, পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় সাংবাদিক অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টির মৃতদেহ তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান ।।