এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,০৩ জুন : স্বামীকে হারিয়েছেন তিন দশক হতে চললো । একমাত্র ছেলে সেও মানসিক প্রতিবন্ধী । ছেলের চিকিৎসা তো দুরের কথা, দু’বেলার দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয় । সরকারি সাহায্যের জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত, বিডিও অফিসে বারবার ছুটে গেছেন । কিন্তু ‘সরকারি বাবুদের দয়া হয়নি’ ! মেলেনি কোনও সাহায্য । এদিকে ভোট আসে, ভোট যায় । সরকার বদল হলেও বদলায় না ভাগ্য । তাই বাধ্য হয়ে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে অভাবরুপী দানবের সঙ্গে অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের ব্লকের চরগোবিন্দপুরের বাসিন্দা “অভাগিনী” অঞ্জনা মণ্ডল ।
চরগোবিন্দপুর গ্রামের এক প্রান্তে বাঁশের দরমা দিয়ে ঘেরা খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট এক কামরার ঘরে বসবাস মধ্য বয়সী অঞ্জনা মণ্ডলের । স্বামী জনমজুরির কাজ করতেন । বছর ত্রিশ আগে তিনি মারা গেছেন । তারপর থেকে কার্যত দুর্দৈব নেমে আসে অঞ্জনাদেবীর জীবনে । জানা গেছে, স্বামী যখন মারা যান তখন অঞ্জনাদেবীর ছেলে খুবই ছোট । ছেলে ও নিজের অন্নসংস্থানের জন্য বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজের পাশাপাশি জনমজুরির কাজ শুরু করেন অঞ্জনাদেবী । অঞ্জনাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে যত বড় হতে থাকে ততই তার মানসিক অসুস্থতার লক্ষ্মণ ধরা পড়তে থাকে । কিন্তু অর্থাভাবের কারনে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি । নিজের জন্য বিধবাভাতা ও ছেলের চিকিৎসার জন্য যদি কিছু সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায় তার জন্য তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসে বারবার ছুটে গেছেন । কিন্তু কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ ওই মহিলার ।
অঞ্জনাদেবী বলেন, ‘এদিকে বসবাসের ঘরের অবস্থাও ভালো নয় । বৃষ্টি হলে চাল দিয়ে জল পড়ে । সরকারি প্রকল্পে ঘর করে দেওয়ার জন্য বিডিও অফিস ও পঞ্চায়েতে গিয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করেছিলাম । কিন্তু সরকারি বাবুদের দয়া হয়নি । এখন ঝড়জলের মরশুম চলছে । ঘরটা যদি ভেঙে পড়ে যায় তাহলে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাবো ?’
এরপর তিনি স্বগোতক্তির সুরে বলেন, ‘সবই আমার কপাল । তা না হলে স্বামীটা অকালে মারা যাবে কেন ? ছেলেটাও পাগল হয়ে গেল । এদিকে আমিও দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছি । আমি না থাকলে ছেলেটার কি হবে, ভাবতেই ভয় লাগে । ওর জন্য রাতে ঘুম হয় না ।’ ওই মহিলাকে সমস্ত রকম সরকারি সহায়তার দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসীরা । এখন প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের কবে টনক নড়ে সেদিকেই সকলে তাকিয়ে রয়েছেন ।।