প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৮ ফেব্রুয়ারী : মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্রের ভক্ত প্রমাণের ধ্বজা টাঙিয়ে রাখা বাড়িতেই গৃহশিক্ষকতা করতেন যুবক সভ্যসাচী মসান । কিন্তু সেখানেই সভ্যসাচীর
যৌন লালসার শিকার হয়ে মর্যাদা হারাতে হল
তফসিলি পরিবারের এক নাবালিকা স্কুল ছাত্রীকে । তবে শুধু মর্যাদাহানিই নয়,পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশের কাছে গৃহশিক্ষক সভ্যসাচীর কুকীর্তি ফাঁস করে দিয়ে এখন খুন হয়ে যাওয়ার ভয়ে তটস্থ হয়ে ররেছে ওই ছাত্রী।একই আতঙ্কে ছাত্রীর বাবা মাও তটস্থ হয়ে রয়েছেন ।যদিও গ্রেফতারি এড়াতে এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে ওই গৃহশিক্ষক। তবে পুলিশ হন্যে হয়ে অভিযুক্ত ওই গৃহ শিক্ষকের খোঁজ চালাচ্ছে । যা শুনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘর(RSS) জেলা কার্যকর্তারাও স্তম্ভিত ।
পুলিশ জানিয়েছে,জামালপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দোলরডাঙ্গা গ্রামে বাড়ি গুনধর গৃহশিক্ষক সভ্যসাচী মসান ওরফে জন্টির । কাছে পিঠেই বাড়ি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া নির্যাতিতা ছাত্রীর ।নাবালিকার মা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছে,’তাঁর মেয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সভ্যসাচী মসানের বাড়িতে টিউশন পড়তে যায়। পড়ানো চলাকালীন ওইদিন সভ্যসাচী হঠাৎতই তাঁদের ঘর থেকে অন্যসব ছাত্রকে বের করে দেয় । শুধু তাঁর মেয়েকেই ঘরে বন্ধ করে রাখে ।এরপর ওই ঘরেই সব্যসাচী প্রথমে জোরজবস্তি করে তাঁর নাবালিকা মেয়ের শ্লীলতাহানি করে।পরে তাঁর মেয়ের শরীরে থাকা সমস্ত জামা প্যান্ট খুলিয়ে সভ্যসাচী তাকে উলঙ্গ করে । তাঁর মেয়ের উলঙ্গ অবস্থার দৃশ্য সভ্যসাচী নিজের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে । এসব নিয়ে তাঁর মেয়ে প্রতিবাদ করে। তখনই সভ্যসাচী হুমকি দেয় যে তার কীর্তির কথা কাউকে জানালে সে সমস্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেবে। এমনকি মেয়েকেও প্রাণে মেরে দেবে বলেও সব্যসাচী মসান হুমকি দিয়ে রাখে ।
নাবালিকার মা পুলিশকে এও জানিয়েছেন,
সব্যসাচীর হুমকিতে ভীত হয়ে পড়ে তাঁর মেয়ে সেদিন প্রাইভেট শিক্ষকের বাড়ি থেকে ফিরে এসে কাউকে কিছু বলেনি । ঘটনার একদিন বাদে তাঁর মেয়ে বাড়ির সবার কাছে সব্যসাচীর কুকীর্তির কথা খুলে বলে। তা শুনে তিনি আর এক মুহুর্ত দেরী না করে ২৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে সব্যসাচী মসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
জেলার পুলিশ সুপার আমনদ্বীপ জানিয়েছেন,
গোপন জবানবন্দি পেশের জন্যে নাবালিকাকে বর্ধমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করানো হয়েছে । নাবালিকার মায়ের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে সভ্যসাচী মসানের বিরুদ্ধে পকসো এ্যাক্ট (POCSO Act) সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে । ঘটনার পর থেকেই
অভিযুক্ত গা ঢাকা দিয়েছে।তার সন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ।
অভিযুক্ত সব্যসাচী মসানের বাড়িতে বুধবার বিকালে গিয়ে দেখা যায় গোটা বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে । বাড়ির ছাদে উড়ছে রামচন্দ্রের মুখাবয়বের ছবি সহযোগে তৈরি একাধিক গেরুয়া পতাকা । বাড়ির সব দরজা জানালা বন্ধ অবস্থায় দেখা যায়। অনেক ডাকাডাকি করেও কারোর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি । সব্যসাচীদের বাড়ি থেকে কারোর সাড়া মিলছে না কেন তা প্রতিবেশীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন,’বাড়ির সবাই এখন গা ঢাকা দিয়েছে ।’ এনিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জেলা কার্যকর্তা শান্তি মাল বলেন,’রাজ্যে ঘটে চলা
নানা ঘটনাবলির দিকে তাকিয়ে অনেকেই এখন বাড়িতে ধ্বজা উড়িয়ে প্রভু রামচন্দ্রের ভক্ত সাজার চেষ্টা করছে । এইভাবে যে প্রকৃত রাম ভক্ত হওয়া যায় না তার উদাহরণ ওই গৃহশিক্ষক।তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্যি হলে তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’
তবে অভিযুক্ত গা ঢাকা দিলেও বড়ই আতঙ্কে রয়েছে নাবালিকা ছাত্রীটি । সে ভয়ে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। কেন আতঙ্ক ,কিসের আতঙ্ক, তা জানতে এদিন ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে,’সব্যসাচী স্যার আমায় বলেছিল তার কুকীর্তির কথা বাড়ির কাউকে না জানাতে । জানালে আমাকে খুন করে দেবে বলে স্যার হুমকি দিয়েছিল । তবুও আমি আমার বাবা মাকে সব জানিয়ে দিয়েছি । মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এর জন্যে সব্যসাচী স্যার আমায় বা আমার বাড়ির কাউকে খুন করে দেবে নাতো! আমার এখন এই ভয়টাই করছে !’
ছাত্রীর বাবা এলাকার এক ব্যবসায়ীর দোকানে
কাজ করেন । মা সাধারণ গৃহবধূ । তাঁরাও সব্যসাচীর হুমকি নিয়ে যথেষ্টই আতঙ্কিত রয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের এই ছাত্রীর বাবা মা বলেন,’আমাদের রাজ্যের সরকার মেয়েদের লেখাপড়া শেখার জন্যে উৎসাহিত করছে।এমনকি ‘কন্যাশ্রী’ ও ‘রূপশ্রী’সহ কত কিছু প্রকল্পও চালু করেছে সরকার। এছাড়াও অনান্য সূযোগ সুবিধাও মিলছে। এসবের ভরসাতেই আমরা আমাদের মেয়েকে সুশিক্ষিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই ইচ্ছা এখন যেন পণ্ড হয়ে যেতে বসেছে ।’
ছাত্রীর মা বলেন,’আমি ’লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে আর্থিক অনুদান পাই।সেই অর্থের অনেকটাই আমি আমার মেয়ের লেখাপড়া শেখার জন্য ব্যয় করি । কিন্তু মেয়ের প্রাইভেট মাস্টার জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়ে আবার আমার মেয়েকে খুনের হুমকি দিয়ে রেখেছে। এর জন্য খুবই দুশ্চিন্তায় আছি ।’ এই অবস্থায় মেয়ের লেখাপড়া শেখার কি হবে ,তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না বলে ছাত্রীর মা জানিয়েছেন ।।