নীলিমা পাশবালিশটা টেনে নিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করে, কিন্তু এ কী কেন আসে না ঘুম?? ফোনটা হাতে নিয়ে ঘেঁটে চলে গ্যালারি, পুরো গ্যালারি ভর্তি যার ছবি অথচ একবারও বলতে ইচ্ছা করছে না যে ‘মেঘ তোমায় ভালোবাসি’, শুধু দুচোখ থেকে উঁকি মারছে এক বিশ্বাসঘাতক মুখ!
মনে পড়ে চরম আবেগের মুহূর্তে কতবার বলেছে ‘মেঘ ভালবাসি তোমায় অনেক অনেক বেশি’ মেঘ স্মিত হেসে বলতো ‘জানি তো আমি সব’ ভালোবাসায় বেঁধে রাখতো দুজন দুজনকে, ধনীর দুলালী নীলিমা রাখতে চায় নি কোনো বিভেদের প্রাচীর, তার উদার প্রেম আকাশে শুধু একটাই নাম সে হলো মেঘ, বাড়ির লোক কতবার চেষ্টা করেছে ভালো সম্বন্ধ দেখে বিয়ে দেওয়ার, ততবারই সে এড়িয়ে গেছে নানা অজুহাতে, জানিয়ে দিয়েছে নিজেকে সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত না করে বিয়ে করবে না সে, বর্তমানে শিক্ষিত মেয়ে তাই মা-বাবাও মেনে নিয়েছে তার কথা, বাবা মাকে আড়াল করে নীলিমা অপেক্ষা করেছে মেঘের জন্য ভালো একটা চাকরি জোগাড় করতে, প্রতিনিয়তই করে গেছে সেই চেষ্টা, কথা ছিলো ছেড়ে না যাওয়ার অথচ বিকৃত কামনার বসে অন্য একজনের হাত ধরে মেঘ যেদিন ছিড়ে গিয়েছিলো নীলিমাকে, দীর্ঘদিনের সঙ্গির এমন পরিবর্তনে আঘাতটা বোধ হয় বুকের পাঁজর গুলো ভেঙেই দিয়েছিলো, এতো ব্যথা যে ভোলার নয়, প্রেমিকা নীলিমার বুক ছেয়ে গিয়েছিলো পাষাণ সমকাঠিন্য।
চরম আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে তার হৃদয়, কি আশ্চর্য এই প্রথম সে অনুভব করে সত্যিকারের আঘাত মানুষকে করে দেয় স্তব্ধ, সেখানে থাকে না কোন অভিযোগ জানানোর ভাষাও, কার কাছে অভিযোগ জানাবে সে যে মানুষটা দিনের পর দিন ভালোবাসার অভিনয় করে ছুঁয়েছে তাকে, সেটা যদি ভালোবাসাই হবে তাহলে পাশের বাড়ির বৌদির সঙ্গে মেঘের যে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য দেখেছিল নীলিমা, সেটা তাহলে কি?? ছি ছি এমন মানুষের হাত ধরে পথ চলতে চেয়েছিল সে, ভাবতে ভাবতে চোখে তন্দ্রা নেমে আসে।
বালিশের নীচ থেকে হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে, ধরবে কি না ধরবে ভেবে কাঁপা কাঁপা গলায় ‘হ্যালো’ বলতেই মেঘের বাবার কান্নার শব্দ,-‘সবকিছু বোধহয় শেষ হয়ে গেল মা’ নীলিমা কোনক্রমে জানতে চায় ‘কেন কি হয়েছে’? কান্না মিশ্রিত কণ্ঠস্বরের ভেসে আসে ভয়ানক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে মেঘের, তো আমি কি করব? বলে ফোন ছেড়ে দেয় সে, হাতের ফোনটার দিকে তাকিয়ে ভাবে আর একটু কি ভালো করে খোঁজখবর নেওয়া দরকার তার? কিন্তু সেই মুহূর্তেও অপমান গুলো এসে দাঁড়ায় সামনে যেদিন মেঘ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো সেদিনটা যে কিছুতেই ভুলতে পারা যাচ্ছে না!!
নাই বা যাক ভোলা তাই বলে কি সহানুভূতি ও নেই, নীলিমা আবারও ভাবার চেষ্টা করে দুর্ঘটনায় আহত মেঘের মুখ, কিন্তু কিছুতেই পারেনা, মনে মনে ঈশ্বরকে ডেকে বলে ‘হে ঈশ্বর একটু কষ্ট দাও বুকে, দাও একটু অনুভূতি, যে মানুষটাকে এতোদিন ভালোবেসে এসেছি হোক না সে বিশ্বাসঘাতক তবু কি তার জন্য কষ্ট পেতে নেই’?? কিন্তু ব্যর্থ হয় প্রার্থনা কিছুতেই আসে না মনে কোনো অনুভূতি।
মনে হয় দীর্ঘদিনের অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মহাশ্বেতা দেবীর ‘ছিন্নমস্তা’ গল্পের মা যেমন নিজ পুত্রের মৃত্যুর সংবাদে চরম শোকগ্রস্থ পরিস্থিতিতেও কোথাও যেন বৌমা একটু জব্দ হয়েছে ভেবে খুশি হয়েছিলো, তবে কি নীলিমার ও মনের অবস্থা সেই একই কথা বলে! এ কথা ভাবাও যে পাপ মনের ভিতর অনুরণিত হতে থাকে ‘পিশাচিনী নীলিমা তুই একটা পিশাচিনী’ সত্যি কারের ভালোবাসা কি কোনোদিন চায় পরাজয়ের প্রতিশোধ…….।।