দিব্যেন্দু রায়,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৬ ফেব্রুয়ারী : আত্মঘাতী হলেন প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে স্বামীকে খুনের চেষ্টা আর অভিযোগে জেলে যাওয়া মহিলার বাবা ও মা । পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার আন্না গ্রামের বাসিন্দা ওই দম্পতির নাম সমীর শেখ (৫৯) এবং চেনাই বিবি (৫৪) । একমাত্র মেয়ে রাবেয়া খাতুন স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করার পর থেকেই ওই দম্পতি রোগ লজ্জার পাশাপাশি তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন । শোনা যাচ্ছে যে মেয়ে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওই দম্পতি । অবশেষে আজ সোমবার সকালে বাড়ির শোবার ঘর থেকে ওই দম্পতি ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে কেতুগ্রাম থানা পুলিশ । ময়নাতদন্তের পর দুটি কবরস্থ করা হয় ।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় সাইকেলে চড়ে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের দ্বারা আক্রান্ত হন রাবেয়া খাতুনের স্বামী নবস্থা গ্রামের বাসিন্দা রমজান শেখ । ৪-৫ জন দুষ্কৃতী মিলে তাকে ভেজালি দিয়ে এলোপাথা ইকোপাতে শুরু করে । যদিও সাদিপুর থেকে বেড়ুগ্রাম যাওয়ার রাস্তায় ঘটনাস্থল বাইক চালিয়ে চলে আসেন আমগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা এক ব্যক্তি । পরে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে খবর পেয়ে আমগড়িয়া গ্রামের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় ।
অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ । পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রমজান শেখেরও বয়ান নেয় । এই ঘটনায় স্ত্রীর ওপরই সন্দেহ প্রকাশ করেন রমজান । সেই সূত্রে রমজানের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ও তার বাড়ির লোকজদের থানায় ডেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে । কিন্তু জেরায় রাবেয়া অসংলগ্ন কথাবার্তা বললে পুলিশ তাকে প্রথমে আটক করে । তদন্ত পুলিশ জানতে পারে যে পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই রমজানের উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়েছিল । এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে বেড়ুগ্রামের বাসিন্দা জামসেদ শেখ(২৮) নামে এক যুবককের নাম । পুলিশ দুই সন্তানের জনক জামশেদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সে রমজানের উপর হামলার কথা কবুল করে । জামশেদের কথা অনুযায়ী মোবাইল ফোনের সুত্র ধরে রাবেয়ার সঙ্গে তার পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । কিন্তু এই প্রেমের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় রাবেয়ার স্বামী রমজান । সেজন্য তাকে দুজনে মিলে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল । এরপর জামশেদ ও রাবেয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে । আদালত তোলা হলে রাবেয়াকে জেল হেফাজত এবং জামশেদকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়।
জানা গেছে,রাবেয়ার একমাত্র ভাই সাবু শেখ পরিযায়ী শ্রমিক ৷ সে বিবাহিত । কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকে সাবু । তার স্ত্রী কেতুগ্রাম থানার আন্না গ্রামে তার বাবা মায়ের কাছে থাকতো । একই সাথে থাকতো সাবুর বৃদ্ধা দিদিমা । মাস দুয়েক আগে সাবুর স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে গেছেন । বাড়িতে ছিলেন সাগর বাবা মা ও দিদিমা । রবিবার রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর একটি ঘরে ছিলেন সাবুর বাবা- মা৷ আর অন্য ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন তার দিদিমা ৷ আজ অনেক বেলা পর্যন্ত সাবুর বাবা মা না উঠায় তার দিদিমা জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে যে তার মেয়ে ও জামাই গলায় ফাঁস লাগিয়ে সিলিং-এর সঙ্গে ঝুলছে । এরপর তিনি চিৎকার করো লোকজন ডাকাডাকি করেন ৷ পরে খবর পেয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশকে দেহ দুটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় । মৃতদের প্রতিবেশী খোকন আলি শেখ জানান, রাবেয়া খাতুন গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই তার বাবা-মা তীব্র হতাশায় ভুগছিলেন । তার জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বলে অনুমান করছেন তারা ।।