এইদিন ওয়েবডেস্ক,সন্দেশখালী,২৫ ফেব্রুয়ারী : ‘আপনারা চুড়ি পরে বসে থাকুন, আমরা শাহজাহানকে ধরছি।’ মমতা ব্যানার্জির ৫০০ আর ১,০০০ টাকার সাহায্য আমাদের আর দরকার নেই। আমরা কি আগে খেতে পেতাম না?’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালী এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের ‘কুখ্যাত’ নেতা শেখ শাহজাহানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মহিলারা এপার রাজ্য সরকার ও রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে এভাবেই প্রকাশ্যে বিষোদগার করতে শুরু করে দিয়েছেন ।
শেখ শাহজাহানের,তার ভাই শেখ সিরাজউদ্দিন, শাহজাহানের দুই সাগরেদ শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে এলাকার সুন্দরী মহিলাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ-গণধর্ষণের মতো মারাত্মক অভিযোগ উঠছে । অভিযোগ উঠছে নিরীহ গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে জমি জায়গা স্বল্প মূল্যে বা জবরদখল করে নেওয়ার । পুলিশ শিবু উত্তমকে গ্রেফতার করলেও এখনো অধরা মূল অভিযুক্ত শাহজাহান । এদিকে শাহজাহান গ্রেপ্তার না হয় খুবই ফুঁসছেন সন্দেশখালীর মানুষ । আর তারই প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেল শনিবার সন্দেশখালীর মাঝেরপাড়া, হালদার পাড়ায় গিয়ে মানুষকে শান্ত থাকার আবেদন জানাতে গেলে এলাকার মহিলাদের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে ।
একটি বৈদ্যুতিক চ্যানেলের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । ভিডিওটি এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন দক্ষিণবঙ্গ বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ সৌরিশ মুখার্জি । ভিডিওতে এক পুলিশ আধিকারিককে উদ্দেশ্য করে জনৈক এক ক্ষিপ্ত মহিলা বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন । তিনি ওই পুলিশ আধিকারিককে জিজ্ঞেস করেন,’আমাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন দিতে পারল না? এই সন্দেশখালি পুলিশের জন্যেই তো । যখন মারপিট হয়েছিল তখন সন্দেশখালি পুলিশ থাকলে আমাদের কি মাঠে মাঠে পালাতে হতো? ছাত্র-ছাত্রীদের এক বছর নষ্ট হলো তার জন্য দায়ী কে হবে? আপনারা হবেন?’
ফেরার তৃণমূল নেতা শাহজাহানের গ্রেফতারী কবে হবে এনিও প্রশ্ন চলে ওই মহিলা । মহিলা বলেন, কবে সাহজাহান গ্রেপ্তার হবে তার তারিখ বলুন ।’ পুলিশ আধিকারিক জানান যে শাহজাহানের গ্রেপ্তারি নির্দিষ্ট কোন তারিখ তিনি দিতে পারবেন না ৷ এর প্রতিক্রিয়া এবং মহিলা বলেন, ‘কেন বলতে পারবেন না? এখন ঝামেলা হচ্ছে বলে আমাদের মুখ বন্ধ করতে এসেছেন আর শাহজাহানের বেলায় নিজেরাই মুখ বন্ধ করে থাকেন, তাই না? শাজাহান শেখকে ধরতে পারেনা আর মহিলাদের মুখ বন্ধ করতে এসেছে ৷ চুড়ি খুলে দিচ্ছি পড়ুন, আর শাড়ি দিচ্ছি মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে থাকুন ।’
মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে তীব্র বিষোদগার করে বলেন,’মমতা ব্যানার্জি মহিলাদের ১,০০০ -৫০০ টাকা দিয়ে বলছে চুপ করো । আমরা মমতার সহযোগিতা চাই না । মমতা যখন টাকা দিত না আমরা বাঁচতাম না? আমাদের স্বামী ইনকাম করেনা ? এখন আমাদের স্বামীদের মাঠে-ঘাটে তুলে নিয়ে গিয়ে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে কেস দিচ্ছে । কে জামিন দেবে?’ ফের ওই মহিলা পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন,’আপনারা চুরি পরে বসে থাকুন আর আমাদের পুলিশের দায়িত্বটা দিন দেখুন শাজাহানকে আমরা ধরতে পারি কিনা ।’
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকদের ওপর হামলার ৫২ দিন পরেও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালী এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের ‘কুখ্যাত’ নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারিনি সন্দেশখালী থানার পুলিশ । গ্রামবাসীদের অভিযোগ যে এলাকায়তেই রয়েছে শাহজাহান । পুলিশ সব বুঝেও তাকে গ্রেফতার করার কোন আগ্রহই দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে তারা । এদিকে শাহজাহান এবং তার দুই সাগরের শিবু হাজরা,উত্তম সর্দারসহ শাহজাহান বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসীদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে । প্রাণের মায়া না করে তারা প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে । বিশেষ করে একের পর এক মহিলাকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের ওই সমস্ত কুখ্যাত নেতাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সন্দেশখালীর মহিলারা । পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ড্যামেজ কন্ট্রোলের নেমেছে সন্দেশখালী থানার পুলিশ । কিন্তু পুলিশকে পড়তে হচ্ছে মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে । শুক্রবার একই প্রচেষ্টায় সন্দেশখালি গিয়েছিলেন ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে এদিন এলাকায় গিয়েছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু । কিন্তু তারাও গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। স্লোগান ওঠে, ‘শেখ শাহজাহান-সিরাজউদ্দিনের গ্রেফতারি চাই’।
ভিডিও শেয়ারের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গ বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ সৌরিশ মুখার্জি লিখেছেন, ‘সন্দেশখালীর উত্তেজিত নারী বিক্ষোভকারীরা তাদের যথাসাধ্য স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের মুখোমুখি হচ্ছে। বলছিলেন, “শেখ শাহজাহানকে ধরতে পারবেন না কিন্তু নারীদের চুপ থাকতে বলছেন”। সন্দেশখালী থানা পুলিশ বরাবরের মত কোন সদুত্তর দিতে না পেরে নীরব থাকে। মহিলারা শাঁখা (বিবাহিত মহিলাদের জন্য চুড়ি) আর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে শাড়ি অফার করেছিল এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে তাদের পুলিশের দ্বায়িত্ব তুলে দিতে বলেছিল যাতে তারা শেখ সাহজাহানকে খুঁজে পেতে পারে।’
একই ভিডিও শেয়ার করে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ‘মমতা পুলিশের বাস্তবতা উন্মোচিত করছেন সন্দেশখালির মায়েরা। আয়নায় মুখ দেখেন তো ডিজি সাহেব? নূন্যতম লজ্জা বোধ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কর্তাদের?জবাব দিতে পারলেন না কেন? কবে আপনাদের সম্রাজ্ঞীর প্রিয়পাত্র শাহজাহান গ্রেফতার হবে?’
রাজ্য বিজেপির সম্পাদিকা লকেট চ্যাটার্জি লিখেছেন, ‘এটাই মমতার নির্লজ্জ্ব পুলিশ ! সবেতেই মুখ বন্ধ করবার প্রবণতা বাঙালি আর সহ্য করবে না! জবাব দিচ্ছে সন্দেশখালী ।’।