এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতাড়(পূর্ব বর্ধমান),২৪ ফেব্রুয়ারী : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে দশটার আশপাশ । সাইকেলে চড়ে বাজারহাট করতে বের হয়েছিলেন স্থানীয় এক বৃদ্ধ । সড়ক পথের একটা মোড়ের কাছে আসতেই একটি টোটো এসে তার সাইকেলের হ্যান্ডেলে আলতো করে ঠেকিয়ে দিয়ে চলে গেল । ধরাশায়ী হওয়া থেকে খুব অল্পের জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে নিলেন তিনি । বৃদ্ধ কিছুটা পায়ে হেঁটে এগিয়ে যেতেই ডবল লেনের সড়ক পথের তেরাস্তার মোড়ে এক ধারে একটি যাত্রীবাহী বাস,অন্যধারে ১২ চাকার একটি পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে । আটকে পড়ে বেশ কিছু যানবাহন । সেই ভিড় থেকে বেড়িয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করেন বৃদ্ধ । কিন্তু ফুটপাতের উপর সারি সারি টোটো আর অটো তার বাধা হয়ে দাঁড়ায় । দু’তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন ছিল সেখানে । কিন্তু ভিড়ের মাঝে তাদের কার্যত অসহায় দেখাচ্ছিল । পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের নাসিগ্রাম মোড়ের এই ঘটনা কার্যত নিত্তনৈমিত্তিক হয়ে গেছে । এখন এই প্রকার ট্রাফিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছেন ভাতাড়বাসী ।
রাজ্যে বেকারত্বের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টোটো । এছাড়া কৃষি ক্ষেত্রে কাজ সীমিত হয়ে যাওয়ায় এবং বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে না পেয়ে শ্রমজীবী মানুষের একাংশ ঝুঁকছে মোটরভ্যান তৈরি করিয়ে ভাড়া খাটানোর পেশার দিকে । যার প্রভাব এসে পড়ছে ট্রাফিক ব্যবস্থার উপর । নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই যাত্রী বা মালপত্র পরিবহন করছে ওই সমস্ত যানবাহন । মোটরভ্যানের ইঞ্জিনের জন্য ব্যবহৃত বাতিল মোবিলের ধোঁয়া একদিকে যেমন দেদার দূষণ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে টোটো আর মোটরভ্যানের দৌরাত্ম্যে সড়ক পথ ধরে কার্যত প্রাণ হাতে করে যাতায়ত করতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের ৷ শুধু টোটো আর মোটরভ্যানই নয়, বেপরোয়া গতির পিকআপ ভ্যানের জন্য সাধারণ মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে ।এদিকে এক সময়ে ‘সেফ ড্রাইভ,সেফ লাইফ’ নিয়ে প্রচার করা পুলিশের নজরদারি এখন অনেকাংশে শিথিল হয়ে যাওয়ায় এই সমস্ত দৌরাত্ম্য চুপচাপ সহ্য করে যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ।
জানা গেছে,ভাতাড় বাজারে রয়েছে চারটি বাসস্টপ-দমকল অফিসের সামনে একটি, নাসিগ্রাম মোড়ে একটি, বাজার এবং গার্লস স্কুলে সামনে একটি করে । কিন্তু ভাতাড় বাজার থেকে কামারপাড়া মোড় পর্যন্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রেলস্টেশন,বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং ইলেকট্রিক অফিস থাকায় সর্বদা ভিড় লেগেই থাকে । বিশেষ করে ভাতাড় বাসস্ট্যান্ড,নাসিগ্রাম মোড় ও কামারপাড়া মোড় পথচারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হয় । কারণ ওই তিন জায়গায় ফুটপাতের কোনো অস্তিত্বই নেই । ভোর থেকে শুরু করে রাত্রি অব্দি ফুটপাত দখল করে থাকে রাশি রাশি টোটো আর অটো । এদিকে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী বাস এবং তার পাশ দিয়ে চলাচল করা যানবাহনের মধ্য দিয়েই পথচারী বা সাইকেল আরোহীদের কার্যত প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয় ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন,ভাতার বাজারের এই প্রকার যানজট সমস্যার কারণে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী থাকাকালীন ভাতারে একটি স্থায়ী বাস স্ট্যান্ড নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন । কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী দল বদলের পর সেই উদ্যোগ ধামাচাপা পড়ে যায় । এদিকে বাসস্ট্যান্ড না হওয়ায় ভাতার বাজারে ট্র্যাফিক যন্ত্রণা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে ।
ভাতারের বাসিন্দা আইনজীবী কৃষ্ণবিনোদ যশ বলেন,’ভাতার বাজার, নাসিগ্রাম মোড় ও কামারপাড়া মোড়ে ফুটপাতের দুপাশে টোটো আর অটো দাড়িয়ে থাকায় যাতায়াত করা খুব বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে ।’ তিনি ওই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়কপথের পাশে ফুটপাতে টোটো ও অটো দাঁড় করানোর উপর নিষেধাজ্ঞার জারি করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘ভাতার বাজারের অন্য কোথাও টোটো অটোদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দেওয়া হোক । তাতে সাধারণ মানুষকে অনেকাংশে কম সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হবে ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘কামারপাড়া রোডে ভাতার বাজারের পুরনো বিডিও অফিসের সামনে দুটি এবং স্টেডিয়ামের কাছে শিশুদের স্কুলের সামনে একটি স্পিডব্রেকার ছিল। কোন কারনে বছরখানেক আগে ওই স্পিডব্রেকার গুলি ভেঙে দিয়েছে পূর্ত দপ্তর । ফলে যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে । বহু মানুষ ওই সড়ক পথ ধরে প্রাতঃভ্রমণ করেন, কচিকাঁচারা স্কুলে যান, তাদের কার্যত প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয় ।’ তিনিও স্পিড ব্রেকার গুলি পুনঃর্নির্মাণ, ভাতারে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ এবং ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের যথাযথ প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছেন । পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি জানিয়েছেন যে ভাতার বাজারের টোটোগুলির জন্য টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিন) চালু করা হোক । তাতে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা হলে নির্দিষ্ট টোটো কে চিহ্নিত করার সহজ হবে এবং অন্যদিকে তেমনি টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধির উপর রাশ টানা সম্ভব হবে ।।