এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,২৪ ফেব্রুয়ারী :
আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে প্রকাশ্যে দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তালিবান । আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ) এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, তালিবান প্রধান হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার অনুমোদন সাপেক্ষে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ওই দুই ব্যক্তির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রাথমিক, আপিল ও উচ্চ আদালতে প্রমাণ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় জারি করা হয়। রায়ের পর তাদেরকে সব ধরনের আইনি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। সব প্রক্রিয়া শেষ করেই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এদিকে গজনিতে দুই জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার একদিন পর, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে যে এই গোষ্ঠীর সমস্ত মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করা উচিত।
জানা গেছে, প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ওই দুই ব্যক্তি হলেন সৈয়দ জামাল ও গুল খান। ময়দানে ওয়ারদাক প্রদেশের লোরা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ জামাল সাত বছর আগে আমির মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আর গুল খান পাঁচ বছর আগে মোহাম্মদ কাসিম নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। দুজনই ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে ।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে গজনি প্রদেশের আলী বাবা ফুটবল স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তালেবানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এই মৃত্যুদণ্ড প্রত্যক্ষ করতে উপস্থিত হয়েছিল বলে জানা গেছে ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা আতিকুল্লাহ দারবিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উচ্চস্বরে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠ করেন। সেখানে এই দুই ব্যক্তির হাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা এই দুই অভিযুক্তকে ক্ষমা করতে চায় কি না। তারা সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। পরে তাদের কাছে আবার জানতে চাওয়া হয়, শরিয়া আইন অনুযায়ী কেউ নিজের হাতে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চায় কি না। তারা এতে রাজি না হলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে আসামীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
এদিকে শুক্রবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তালিবানকে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করতে বলেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক লিভিয়া স্যাকার্ডি গতকালের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন,’জীবনের অধিকারের লঙ্ঘন হিসাবে আমরা সমস্ত মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে । তালিবান বারবার জনসমক্ষে এটি প্রয়োগ করে, যা মানব মর্যাদার জন্য চরম অপমান, সেইসাথে আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ডের লঙ্ঘন, এবং এটি কখনোই মেনে নেওয়া যায় না ।’ এই সংগঠনটি তালিবানকে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক শাস্তি বাতিল করতে বলেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে,’জনসাধারণের মৃত্যুদণ্ড মৃত্যুদণ্ডের সহজাত নিষ্ঠুরতাকে যুক্ত করে এবং এটি শুধুমাত্র ভুক্তভোগীর উপর অমানবিক প্রভাব ফেলবে না পাশাপাশি যারা মৃত্যুদণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী তাদের উপর একটি নৃশংস প্রভাব ফেলতে পারে।’
একইসঙ্গে তালিবানের নিয়ন্ত্রণে ন্যায্য বিচারের অধিকার না পাওয়ার বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে এই সংগঠনটি।
লিভিয়া স্যাকার্ডি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের কারণে তালিবানদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছে ।।