এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,২২ ফেব্রুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সন্দেশখালির তৃণমূল কংগ্রেসের ‘কুখ্যাত’ নেতা শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে এমনিতেই রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । এর মাঝেই হুগলি জেলার খানাকুল থানার মালঞ্চ ফাঁড়ির সাব-ইনস্পেক্টর (এসআই) তুষার মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্রেসলেট চোর সন্দেহে এক বিবাহিত মহিলাকে ফাঁড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে পায়ে, এমনকি গোপনাঙ্গে লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মারধরের অভিযোগ উঠেছে । এতেও মন ভরেনি ওই পুলিশ আধিকারিকের । ওই মহিলার মুখে লঙ্কার গুঁড়ো পর্যন্ত মাখিয়ে দেয় বলে অভিযোগ । এদিকে এই প্রকার পাশবিক অত্যাচারের পর প্রায় সঙ্গাহীন হয়ে পড়েন ওই মহিলা । ওই অবস্থাতেই তুষার মণ্ডল তার হাতে ১,০০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ।
আক্রান্ত মহিলা বর্তমানে স্থানীয় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন । মহিলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । ভিডিওতে কাঁদতে কাঁদতে তার উপর ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত মারধরের কাহিনী বর্ণনা করেছেন তিনি । আর মহিলার মুখ থেকে মালঞ্চ ফাঁড়ির এসআই তুষার মণ্ডলের পাশবিক অত্যাচারের কাহিনী শোনার পর শিউরে উঠেছেন নেটিজেনরা । এদিকে ঘটনার কথা শোনার পর ওই এস আইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা । এসআই তুষার মণ্ডলের বরখাস্তের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে থানা ঘেরাও করে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় ক্ষিপ্ত জনতা । সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালঞ্চ ফাঁড়ির অভিযুক্ত সাব-ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর রজু করা হয়েছে।
জানা গেছে,যে ব্রেসলেট চোর সন্দেহে ওই মহিলার পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে সেটি মালঞ্চ ফাঁড়ির সাব-ইনস্পেক্টর (এসআই) তুষার মণ্ডলের । আসলে গত ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ফাঁড়ি সংলগ্ন স্কুলমাঠে সহকর্মীদের সাথে ভলিবল খেলছিলেন তুষার মণ্ডল । তখনই তার হাতের সোনার ব্রেসলেটটি খুলে পড়ে যায় । তখন থেকেই হন্যে হয়ে নিজের বালাটির সন্ধান চালাচ্ছিলেন তুষার । ঘটনার তিন দিনের মাথায় ফাঁড়ি সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলের কচিকাঁচা পড়ুয়াদের সে একপ্রস্থ জেরাও করে । ওই স্কুলেই পড়ে আক্রান্ত মহিলার শিশুপুত্র । তুষার তাকেও জেরা করে । শিশুটির কথাবার্তা শুনে তার উপর সন্দেহ গিয়ে পড়ে ওই পুলিশ আধিকারিকের । তার ভিত্তিতেই ২৬ জানুয়ারী শিশুটির মাকে ডেকে হারিয়ে যাওয়া সোনার ব্রেসলেট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন তুষার । এমনকি মহিলার বাপেরবাড়িতেও তল্লাশিও চালান । কিন্তু তল্লাশিতে ব্রেসলেট মেলেনি । এরপর বুধবার ৫ বছরের ছেলে সহ ওই মহিলাকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে চলে অমানবিক নির্যাতন ।
জানা গেছে, প্রহৃত মহিলা পরিচারিকার কাজ করেন । মহিলার স্বামী কলকাতায় শ্রমিকের কাজ করেন । অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবার । এই রকম একটি দরিদ্র পরিবারের এক মহিলাকে চোর সন্দেহে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্দয়ভাবে মারধরের ঘটনার পর রাজ্য পুলিশের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।।