এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,২১ ফেব্রুয়ারী : হুগলি জেলার চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত কানাইপুরের আদর্শনগর এলাকার আট বছরের শিশু শ্রেয়াংশু শর্মার নির্মম হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে । এই ঘটনায় পুলিশ শিশুটির মা শান্তা শর্মা ওরফে গুড্ডি এবং তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ইশরাত পারভীনকে গ্রেপ্তার করেছে । পুলিশ জানতে পেরেছে যে ওই দুই মহিলার মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল । এমন কি গভীর রাত পর্যন্ত তারা ফোনে কথাবার্তা বলতো । দুই মহিলার সমকামী সম্পর্কের কথা যাতে প্রকাশ্য না আসে সেজন্যই তারা শিশুটিকে হত্যা করেছে বলে মনে করছে পুলিশ ।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কানাইপুরের আদর্শ নগর এলাকায় এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে । আট বছরের স্নেহাংশু শর্মাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয় । শিশুটিকে নির্দয়ভাবে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। শুধু তাই নয়, শিশুটির দুই হাতের শিরাও কাটা হয়েছে । হত্যাকাণ্ডের সময় টিভির ভলিউম জোরে করে দেওয়া হয়েছিল এবং বাড়ির পোষা কুকুরটিকে বেঁধে রাখা হয়েছিল । চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শ্রেয়াংশুর দুই হাতের শিরা কেটে মাথায় ভগবান গণেশের মূর্তি দিয়ে আঘাত করা হয় ।
এদিকে খবর পেয়ে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট ফরেনসিক দল নিয়ে এসে ঘটনা তদন্ত শুরু করে । ফিঙ্গারপ্রিন্ট,রক্তের নমুনা, ঘটনাস্থলের তথ্য প্রমান, প্রতিবেশীদের স্বাক্ষ, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে এই হত্যাকাণ্ডে খুব কাছের লোক জড়িয়ে আছে । আর তখনই মৃত শিশুর মা শান্তা শর্মা ও ইশরাত পারভীনের অনৈতিক সম্পর্ক পুলিশের সামনে আসে । এরপর মৃত শিশুর মা শিশুটির শান্তা শর্মাকে বাড়ি থেকে এবং শান্তার বান্ধবী ইশরাত পারভীনকে খিদিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, মৃত শ্রেয়াংশুর মা শান্তা শর্মা ওরফে গুড্ডির সঙ্গে ইশরাত পারভীন নামে এক মহিলার সমকামী সম্পর্ক ছিল। শ্রেয়াংশু তার মাকে ইশরাতের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছিল । এই অনৈতিক সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে চলে আসার আশঙ্কা করছিল দুই মহিলা । তাই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে শান্তা তার সঙ্গী ইশরাত পারভীনকে নিয়ে নিজের ছেলেকে খুন করে ।খুনের জন্য একটি সবজি কাটার ছুরি ব্যবহার করে তারা । ওই ছুরি দিয়েই কাটা হয় শ্রেয়াংশুর দু’হাতের শিরা । শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে কোপানো হয় । ভগবান গণেশের মূর্তি দিয়ে আঘাত করা হয় শিশুর মাথায় । খুনে ব্যবহৃত ছুরি ও গণেশের মূর্তিটি পুলিশ উদ্ধার করেছে । মৃত শ্রেয়াংশুর বাবা পঙ্কজ শর্মা এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে,পঙ্কজ কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন । তার স্ত্রী শান্তা একটি কসমেটিক দোকানে কাজ করতেন। বিয়ের আগে থেকেই ইশরাত পারভীন ও শান্তার বন্ধুত্ব ছিল । বিয়ের আগেও তাদের দুজনের সমকামী সম্পর্ক ছিল বলে পুলিশ জানতে পারে । ২০১২ সালে পঙ্কজ শর্মাকে বিয়ে করেছিলেন শান্তা। অন্যদিকে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন ইশরাত পারভীন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যান ইশরাত । এদিকে শান্তারও তার স্বামীর সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল না। পঙ্কজ বাড়ি থেকে দূরে কলকাতায় কাজ করতেন। সেই সুযোগে শান্তা ও ইশরাতের সম্পর্ক অবিরাম অনৈতিক সম্পর্ক চলতে থাকে। বিয়ের পরও প্রায়ই দেখা হতো দুজনের।
পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করলে শ্রেয়াংশুর মা এবং তার বন্ধু ইশরাত পারভীনকে শ্রেয়াংশুর বাড়ি থেকে বের হতে দেখে । পুলিশ তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা তাদের অপরাধের কথা কবুল করে ।এমনকি ঘটনার দিন শান্তার সঙ্গে ইশরাতের ফোনে কথাও হয়। ঘটনাস্থলে উভয়ের মোবাইল টাওয়ারও দৃশ্যমান ছিল বলে জানতে পারে পুলিশ । শান্তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনরা জানিয়েছেন যে তারা ঘুনাক্ষরেও তাদের এই সম্পর্কের বিষয়ে টের পাননি । দুই ঘাতকের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা ।।