প্রথম দৃশ্য : –
(স্থান- ইন্দ্র – এর রাজ্যসভা)
দৃশ্য পট-(ভাষা দিবস পালন/ একুশে ফেব্রুয়ারি পালন হচ্ছে–উর্বশী, মেনকা, রম্ভা ইংরেজি- হিন্দি বাংলা চু টু ল গানে নাচ করছে।)
রাজসভাতে নারদের প্রবেশ-
নারদ- নারায়ন! নারায়ণ! (সবাইকে নমস্কার এর ভঙ্গিতে প্রণাম।)
ইন্দ্র – কি উপলক্ষে আপনার আগমন দেবর্ষি..
নারদ – নারায়ণ! নারায়ণ!এমনি আর কি সবই প্রভুর ইচ্ছে । প্রভুর মুখে শুনলাম আপনার সভাতে এ বছর ভাষা দিবস পালন করছেন, তাই দেখতে এলাম । (স্মৃত হেসে)…
ইন্দ্র – আর বলবেন না বাঙালির গুতো আর কি? আরে বাঙালি রা সব জায়গায় আন্দোলন, আন্দোলন যত দাও তত বেশি করে চায় মন আর ভরে না!
নারদ -নারায়ণ, নারায়ণ! – – – মানে বুঝলাম না!
ইন্দ্র – কি আর বলব রবিবাবু, বঙ্কিম বাবু, শরৎ, বিদ্যাসাগর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়,মধুসূদন, অতুলচন্দ্র সেন-উনারা বললেন এবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস পালন করতে হবে।না হলে উনারা আর আমার সভাতে ভাষা চর্চা, সাহিত্য চর্চা, কিছুতেই আসবেন না।
ইন্দ্র- তার সঙ্গে রফিক’ সালাম’ বরকত’ ওরা তো অনশনে বসে গিয়েছিল । তাই এবার ভাষা দিবস পালন করতে বাধ্য হলাম।
নারদ – বলেন কি কিন্তু উনাদের তো সভাতে দেখছি না!
ইন্দ্র – কি করে দেখবেন? উনারা তো পারিজাত বাগানে ধরনায় বসেছেন ।
নারদ- নারায়ণ… নারায়ন… তা কেন! তা কেন!
ইন্দ্র – আরে বুঝছেন না কেন! মর্ত্য এর হাওয়া স্বর্গেও লেগেছে । ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব ওই রিসেন্ট স্বর্গে আসা বেশ কিছু চ্যাংড়া বুদ্ধিজীবী ছেলেরা জোর করে নিজ হাতে তুলে নিয়েছে ।
ওরা প্রোগ্রাম এর সিডিউল তৈরি করেছে, আর ওরা জেদ ধরেছে উর্বশী, রম্ভা, মেনোকা দের হিন্দি, উড়িয়া ভোজপুরি ও ইংলিশ এর সংমিশ্রনে এক আজব বিংলিস্’ মিউজিকে নাচতে হবে.,.. ।
উর্বশী- আমদের আর সংস্কৃত গানে নাচতে ভালো লাগছে ।
না, এক টু ডিস্ক ও ডেন্স হলে মাজা টা এক টু ছাড়ে…
নারদ- নারায়ণ! নারায়ণ! তা তো বটে, তা তো বটে নারায়ণ নারায়ণ..! সবই প্রভুর ইচ্ছা..
ইন্দ্র- চ্যাংড়া বুদ্ধিজীবী দের দল ভারী তাই রাগে অপমানিত হয়ে রবী, বিদ্যাসাগর, শরৎ ,মধুসূদন, অতুলচন্দ্র সেনপারিজাত বাগানে ধারনায় বসেছে। কি যে ঝামেলায় পড়লাম……..
( গানের তালে তালে তখন ও ইন্দ্র এর রাজসভা তে নাচ চলছে।)
ইন্দ্র, নারদের প্রস্থান……
দ্বিতীয় দৃশ্য –
দৃশ্য পট- (ইন্দ্র কানন অর্থাৎ পারিজাত বাগান-রবী, শরৎ বিদ্যাসাগর মধুসূদন, অতুলচন্দ্র সেন বরকত প্রমূখ স্বনামধন্য বাঙালি রা ধরনায় বসেছেন ।)
বিদ্যাসাগর- আজকালকার বাবা মারাই তো সন্তানদের মাথাটা খেয়েছে ।সন্তানদের মাতৃভাষা শেখাতে তাদের ঘেন্না, তারা তাদের মাতৃভাষা শিক্ষা দিতে চাই না। কি জন্যে যে মশাই বর্ণপরিচয় লিখেছিলাম আজ ভেবেই নিজের একটা খারাপ লাগে.. .
রবীন্দ্রনাথ – কি আর বলব পণ্ডিত মশাই আমি তো বলেছিলাম ” মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ এর সমান” নিজেরই আজ লজ্জা লাগছে আমি বাংলা ভাষায় কবিতা লেখে বিশ্বকবি. নোবেলে পেলাম, সে নোবেল আবার চুরিও করে নিল।
মধুসূদন- বাংলার অপসংস্কৃতি স্বর্গে এসো হাজীর হবে তা ভাবতে পারিনি ছি ছি ছি।
দৃশ্য পট – (এমন সময় পারিজাত বাগানে একজন পাগলের প্রবেশ, যে রিসেন্ট পৃথিবীতে মারা গেছে এবং স্বর্গে এসেছে। পাগল গান গাইতে গাইতে প্রবেশ করছে…. )
(গান)
বাংলা আমার স্বপ্নদেখা,
বাংলা মনের আশা ।
বাংলা মায়ের স্নেহ ছায়া,
বাংলা ভালোবাসা ।
বাংলা আমার প্রিয়ার হাসি,
মায়ের শঙ্খধ্বনি ।
বাংলা আমার অ, আ, ক, খ,
বাংলা সঞ্জীবনী ।
বাংলা আমার সূর্য ওঠা,
পাখির কলতান ।
বাংলা ভাষায় কথা বলি,
বাংলাতে গায় গান ।
বাংলা আমার হৃদয় মাঝে,
বাংলা গলার হার ।
বাংলা আমার দেহমনে,
মনোবীণার তার ।
বাংলা আমার আকাশ বাতাস,
বাংলা নদীর জল ।
বাংলা আমার মনের কথা,
বাংলা দেহের বল ।
বাংলা তে ই কান্না হাসি,
বাংলা তে অভিমান ।
বাংলাদেশে জন্ম আমার,
বাংলা তে ই সম্মান ।
বাংলা আমার জীবন, মরণ,
বাংলা নাড়ির টান ।
বাংলা আমার মা এর পরশ,
বাংলা আমার প্রাণ ।
বাংলা আমার স্বাধীনতা,
রক্তে রাঙানো দিন ।
জীবন দিয়ে শোধব,
মোরা মাতৃভাষার ঋণ ।
মধুসূদন- সাধু, সাধু……….
এখনো বাংলা কে অপসংস্কৃতি গ্রাস করতে পারেনি কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের ধারা কে বহমান রেখেছে।
দৃশ্য পট-(সবার চোখে আশার আলো)
অতুলচন্দ্র সেন- রবিবাবু আজকে আমার ওই গানটা গাইতে খুব ইচ্ছে করছে।… “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি “।
(গানটা একসঙ্গে সবাই মিলে গায়বে..)
গানটা হবার পর সবার প্রস্থান –
নারদ – (হেসে হেসে…) নারায়ণ নারায়ণ সব ই প্রভুর ইচ্ছে, সব ই প্রভুর মায়া……. নারায়ণ নারায়ণ…
।। সমাপ্ত ।।