এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ ফেব্রুয়ারী : একের পর এক দুর্নীতি ও সন্দেশখালির সন্ত্রাসের অভিযোগের মাঝেই খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের যৌন সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করে নতুন বিতর্কে জড়ালে কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলার তথা অভিনেত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় । সোমবার পুরসভার বাজেট অধিবেশনে বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে খ্রিস্ট ধর্মের ধর্মগুরুদের সঙ্গে নানদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের ‘গল্প’ বলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন তিনি । অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আমার গল্প পশ্চিমী দেশকে কেন্দ্র করে । নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে খ্রিস্টান দেশগুলি । সেখানে ওপেন সেক্স প্রচলিত । চার্চকে কেন্দ্র করে পোপ অথবা ফাদার , নান অথবা সিস্টার এর মধ্যে যে যৌন সম্পর্ক হয় তা আনকমন নয় ।’ এরপর মূল গল্প বলতে শুরু অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন,’একদিন এক ফাদার গাড়ি করে চার্চে যাওয়ার সময় অল্পবয়সি সুন্দরী নান তাঁর কাছে লিফট চান। গাড়িতে ফাদার নানের শরীর স্পর্শ করছিলেন। তখন নান বলেন, ‘আপনি আর্টিকল ১১২ পড়েননি?’ তা শুনে হকচকিয়ে যান ফাদার। চার্চে এসে বাইবেলের আর্টিকল ১১২ পড়ে দেখেন। সেখানে লেখা, ‘গভীরে যাও। আরও গভীরে যাও। তবেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারবে।’ মরাল অফ দ্য স্টোরি, বাইবেলটা ঠিকমতো পড়া থাকলে তিনি নানকে ক্লু দিতে পারতেন। অর্থাত্ বাইবেল হোক বা মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট, যে কোনও কিছু ঠিকমতো পড়া না থাকলে অসুবিধা ।’
কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল তৃণমূলের কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গল্প বলার উদ্দেশ্য ছিল মূলত বিরোধী কাউন্সিলরদের আক্রমণ করা । কিন্তু তার এই বক্তব্যের পরে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ।
কলকাতা পুরসভার বিজেপির কাউন্সিলর সজল ঘোষ বলেছেন,’আর কত নির্লজ্জ হবে এরা, একজন তৃণমূল মহিলা কাউন্সিলর, কলকাতা পুরসভার বাজেট বক্তৃতায় বক্তব্য রাখতে এসে, ক্রিশ্চানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ থেকে শুরু করে পোপ,ফাদার,নান এবং সিস্টারদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের রসালো গল্প বলছেন l।আমাদের মেয়র ও একজন সংখ্যালঘু, সেখানে এইরকম ভাবে ভারতবর্ষের আরেকটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মের প্রতীক যাঁরা তাদেরকে এভাবে অসম্মান করা যায় কি? অত্যন্ত ঘৃণ্য, পৌরমাতাকে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি ।’
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে তৃণমূল কাউন্সিলর এর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘মাননীয়া বিধানসভা থেকে শুরু করে যত্রতত্র বিভিন্ন কাল্পনিক গল্প ফাঁদেন। আর তোলামূলের কাউন্সিলর আবার এক কাঠি উপরে উঠে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পুরসভায় পুরসভার বাজেট বক্তৃতায় যৌনতার গল্প শোনাচ্ছেন। তাও খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ থেকে শুরু করে ফাদার, নান এবং সিস্টারদের মধ্যে সম্পর্কের রসালো গল্প। যারা কিনা এ রাজ্যে সংখ্যালঘু। যেমন ঝাড় তেমন বাঁশ। যে চেয়ারে একসময় সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মতো প্রণম্য ব্যক্তিত্বরা বসেছেন, আজ সেই চেয়ারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরই একজন প্রতিনিধি বসেন। এই ঘৃন্য অশোভনীয় ঘটনার তিনি প্রতিবাদটুকুও করেন নি। এ পশ্চিমবঙ্গের লজ্জা।
তোলামূল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির এজেন্ডাই হল সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এবং তাদের ধর্মকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা এবং ব্যবহার করা হয়ে গেলে লাথি মেরে ছুঁড়ে ফেলা। বগটুইতে গণহত্যা, আমতার আনিস খান হত্যা, জয়নগরের দলুয়াখাকিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিবারের ওপর হামলা কিংবা জনজাতি কুড়মি নেতাদের গ্রেফতার করা এ সবই তার প্রমান। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে তো আগেই রসাতলে পাঠিয়েছে তোলামূল, রাজ্য জুড়ে এখন শুধুই অপসংস্কৃতি, ধর্ষন, চুরি, জোচ্চুরি, তোলাবাজির মতো ঘটনা। আপামর পশ্চিমবঙ্গবাসীর আজ ভাবা উচিৎ কাদের হাতে তারা রাজ্যের শাসনভার তুলে দিয়েছেন?’
কলকাতা পুরসভা তৃণমূল কাউন্সিলরের এই বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতেই পুর অধিবেশনের কার্যবিবরণী থেকে অনন্যার এই মন্তব্য চেয়ারপার্সন মালা রায় বাদ দিয়ে দেন। পাশাপাশি কাউন্সিলরের এমন মন্তব্যের জন্য জবাবদিহি চেয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ।।