এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৯ ফেব্রুয়ারী : কোনো ধর্ষিতার নাম,পরিচয় বা ছবি প্রকাশ্যে নিয়ে আসা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ । কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালির এক ধর্ষিতা মহিলার ভিডিও অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে খোদ রাজ্য পুলিশই সেই আইন ভাঙল বলে অভিযোগ উঠছে । যদিও বিতর্ক হতেই রাজ্য পুলিশের সেই পোস্টটি ডিলিট করে দেওয়া হয় । কিন্তু তার আগেই স্ক্রীন শট নিয়ে রেখে দেন অনেকে । রাজ্য পুলিশের সেই পোস্টের স্ক্রীন শট এবং পোস্টের লিঙ্ক দিয়ে ন্যাশানাল কমিশন ফর উইমেন্স(NCW)-এর চেয়ারপার্সনের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজিপি) তথা পুলিশ মহাপরিদর্শক রাজীব কুমারসহ ঘটনায় যুক্ত অন্যান্য অফিসারদের বিরুদ্ধে মামলা করে কারাগারে পাঠানোর দাবি তুললেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ।
চিঠিতে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালি এলাকায় যে ঘটনা ঘটছে তা আপনি ভালো করেই জানেন। বিভিন্ন নৃশংসতা, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ ওই এলাকার নারীদের। গ্রাউন্ড রিপোর্ট পেতে এনসিডবলু-এর দল ওই এলাকা পরিদর্শন করেছে। আপনি ওই এলাকায় স্থানীয় পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কার্যকলাপ সম্পর্কে ভাল জানেন।
সম্প্রতি, একজন অপরাধী, নাম শিবু হাজরা, টিএমসি নেতা, গণধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ১৬৪ সিআরপিসি ধারায় রেকর্ড করা একজন নির্যাতিতার বক্তব্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আজ সেই মহিলার অভিযোগ, শিবু হাজরা এবং অন্যদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়ার জন্য সেই এলাকার অপরাধীরা তাঁর বাড়ি ভাংচুর করেছে এবং তাঁর জীবন এখন ঝুকিপূর্ণ।’ সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ,’পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এই ঘটনার জন্য একমাত্র দায়ী কারণ তারা নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করেছে। জবানবন্দি নেওয়ার জন্য নির্যাতিতা মেয়েটিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যায় পুলিশ। তার বক্তব্য রেকর্ড করার আগে,পুলিশ নির্যাতিরার একটি ছোট ভিডিও রেকর্ড করেছে, যেখানে পুলিশ তাকে বলতে বাধ্য করেছে যে পুলিশ তাকে তার বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে গেছে এবং সেই ভিডিওটি অফিসিয়াল এক্স-এ আপলোড করা হয়েছে ।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘বেশ কয়েকবার, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে যে কোনও নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না, কিন্তু পুলিশ নির্যাতিতাকে সমাজে হেয় করার এবং সবার সামনে তাকে অপমান করার একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে একই কাজ করেছে। অনেক সাহস সঞ্চয় করার পর, ওই এলাকার মহিলারা তাদের উপর ঘটে যাওয়া অপরাধের অভিযোগ করছেন এবং পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করছে যাতে তারা এগিয়ে না আসে।’
সুকান্ত মজুমদার ন্যাশানাল কমিশন ফর উইমেন্স-এর চেয়ারপার্সনের কাছে দাবি জানিয়েছেন,’পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করে একটি গুরুতর অপরাধ করেছে এবং এটি ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ২২৮এ-এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুলিশই অপরাধী এবং এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে সময়ের অপচয় হবে। আপনাকে এই বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দায়িত্বে থাকায়, মহাপরিচালক এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক রাজীব কুমার এবং অন্যান্য অফিসারদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের বারের পিছনে পাঠাতে হবে ।’ তিনি আবেদন জানান,অবিলম্বে এই অভিযোগ এবং পদক্ষেপ বিবেচনা করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে।’
সুকান্ত মজুমদারের পোস্ট করা স্ক্রীন শট অনুয়ায়ী, রাজ্য পুলিশের তরফে ভিডিওটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারী বিকেল ৩.০৬ নাগাদ পোস্ট করা হয়েছিল । পোস্টে বলা হয়েছে,’সংযুক্ত ভিডিওতে নির্যাতিতার(ধর্ষিতার নাম) বক্তব্যের মধ্যে প্রকৃত সত্য রয়েছে । পুলিশকে অপদস্ত করার নির্লজ্জ উদ্দেশ্য নিয়ে এমন ইচ্ছাকৃত মিথ্যার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে (৩/৩)’৷ ভিডিওর স্ক্রীন শট নেওয়ার সময় ২৮ হাজার ভিউ হয়েছিল । যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিশের তরফে এনিয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশ্যে আসেনি । তবে আইনের রক্ষক হয়ে পুলিশ নিজেই আইন ভাঙায় সন্দেশখালি কান্ডে শোড়গোলের মাঝে চাপে পড়ে গেছে রাজ্যে শাসকদল ।।