এইদিন ওয়েবডেস্ক,বীরভূম,১৮ ফেব্রুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালিতে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহজাহানের নেতৃত্বে যে কি প্রকাশ সন্ত্রাস চালিয়েছিল তা আস্তে আস্তে সব প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । অভিযোগ শুধু জমি জায়গা দখলই নয় গ্রামের সুন্দরী মহিলাদের রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে পার্টি অফিসে গণধর্ষণ করা হতো । জনৈক মহিলা আদালতে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের এবং গোপন জবানবন্দী দেওয়ার পর পুলিশ শাহজাহানের দুই ডান হাত তৃণমূলের সন্দেশখালির ২ নম্বর ব্লক সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু এবং উত্তম সরদারকে গ্রেফতার করেছে ৷ তাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগ সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ । এখনো বহু মহিলা ওই দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে সড়ক হচ্ছেন । দুই দলীয় নেতা গ্রেপ্তারের পরেও তৃণমূল সুপ্রিমো দাদা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মতে সন্দেশখালির ঘটনাটি আদপে ‘বিরোধীদের ষড়যন্ত্র’ ।
আজ রবিবার বীরভূমের জনসভা করতে এসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি । জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় তুমি মন্তব্য করেন সন্দেশখালিতে ‘ঘটনা ঘটানো হয়েছে’ । মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘প্রথমে ইডিকে পাঠিয়েছে, তারপর বিজেপি ঢুকেছে। আর কিছু মিডিয়া ঢুকেছে। ঢুকে তিলকে তাল করছে। শান্তির পরিবর্তে আগুন লাগাচ্ছে ।’ এর আগে সন্দেশখালিতে যে সমস্ত মহিলাদের সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে ওই দুই তৃণমূলের নেতার বিরুদ্ধে ও জানান তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী ‘বহিরাগত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ।
আজ বীরভূমে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’কোনও মহিলা আজ পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেনি বা এফআইআর করেনি । আমি পুলিশকে বলেছি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করুন। আমাদের ব্লক সভাপতিও গ্রেফতার হয়েছে। এমনকী ভাঙড়ের আরাবুলও তো গ্রেফতার হয়েছে ।’ যদিও সন্দেশখালীর বাসিন্দাদের অভিযোগ যে থানায় এফ আই আর দায়ের করতে গেলে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দিত ৷ এমনকি যে মহিলা আদালতে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি যদি থানায় যেতেন তাহলে তার বয়ান পাল্টে দিয়ে দোষী তৃণমূল নেতাদের বাঁচানোর চেষ্টা করত পুলিশ, বলে অভিযোগ তাদের। এমনকি সন্দেশখালির ‘ত্রাস’ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে পুলিশ বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠছে ।
উল্লেখ্য, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হলো রেশন দুর্নীতি । আর এই দুর্নীতিতে মূল মাথা প্রাক্তন খাদ্য মন্ত্রী জতপ্রিয় মল্লিক ও তার সহযোগী বাকিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা ইতিমধ্যেই জেলে গেছেন। রেশন দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে সন্দেশখালীর কুখ্যাত নেতা সাহজাহানের । ইডির পাঁচ সদস্যের একটি তদন্তকারী দল সিআরপিএফ এর নিরাপত্তায় সন্দেশখালি শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেলে আক্রান্ত হতে হয় । শাহজাহানের ‘রোহিঙ্গা বাহিনী’ লাঠি সোটা রড নিয়ে আধিকারিক ও সিআরপিএফ জওয়ানদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাপক মারধর করে । তিনজন ইডির আধিকারিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। শাহজাহানের বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরাও । তাদেরও বেদম পেটানো হয় এবং ক্যামেরায় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও হয় বলে অভিযোগ । এমনকি ইডির আধিকারিকদের ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাহিনীর বিরুদ্ধে । তারপর থেকে অন্তরালে চলে যায় শাহজাহান ।প্রথমে অনুমান করা হয়েছিল যে শাহজাহান বাংলাদেশে পালিয়েছেন৷ কিন্তু আদালতে আগাম জামিনের জন্য একের পর এক আবেদনে প্রমাণিত হয়ে যায় অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান সন্দেশখালি বা সংলগ্ন এলাকাতেই আত্মগোপন করে আছেন । এযাবৎ শাহজাহান গ্রেপ্তার না হওয়ায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইডি । যদিও রাজ্য পুলিশের ডিজি শাহজাহান গ্রেপ্তার না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকেই দোষারোপ করেছেন ।
এদিকে আজ শিবু হাজরাকে বসিরহাট আদালতে তোলা হলে আট দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয় । আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী তাকে ফের আদালতে হাজির করানো হবে । পাশাপাশি আজ বিকেলে শিবু হাজরাকে সন্দেশখালির ২ নম্বর ব্লকের দায়িত্ব থেকে ‘সাময়িকভাবে’ সরানোর কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু । শিবুর পরিবর্তে ওই স্থানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোকে ।।