এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ ফেব্রুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালিতে অশান্তির জন্য বিজেপি ও আরএসএসকে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । যদিও শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদার নামে যে ২ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল ইতিমধ্যে তারা পুলিশ হেফাজতে। তাদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ,খুনের চেষ্টা সহ একাধিক ধারায় মামলা রজু করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ । সন্দেশখালীর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ শাহজাহানের ডানহাত শিবু-উত্তমের গ্রেফতারির আগে বিধানসভায় বিজেপি ও আরএসএসকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য বিজেপির তাঁকে কটাক্ষ করেছেন,’এসেছিলেন সততার প্রতীক হিসেবে, হয়ে গেলেন লজ্জার প্রতীক।’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,”এসেছিলেন সততার প্রতীক হিসেবে, হয়ে গেলেন লজ্জার প্রতীক। মহিলাদের ওপর অত্যাচার – ছোট্ট ঘটনা, সাজানো ঘটনা, লাভ অ্যাফেয়ার্স বলে কতদিন আর ধামাচাপা দেবেন দিদি? সন্দেশখালির দুষ্কৃতী মহিলা নির্যাতনকারী এবং মূল কালপ্রিট শেখ সাহজাহানকে কবে গ্রেফতার করবেন মাননীয়া ?’ পাশাপাশি তিনি হ্যাশট্যাগ সন্দেশখালি উইমেন এক্সপ্লয়টেশন,হ্যাশট্যাগ বাংলা বিচার চায়,হ্যাশট্যাগ ওয়েস্টবেঙ্গল ব্যবহার করেছেন ।
উল্লেখ্য,দিন কয়েক আগে সন্দেশখালির ঘটনা প্রসঙ্গে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যারা মুখে মাস্ক পরে ছবি তুলছে, বিজেপির কর্মী । কিভাবে তারা বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসে একটা এলাকায় অশান্ত করার চেষ্টা করেছে,আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে । ওখানে আরএসএসের একটা বাসা আছে সাত আট বছর আগেও ঝামেলা হয়েছিল ওখানে । বাংলার কতগুলো স্পটের মধ্যে সন্দেশখালি ও একটা স্পট,মনে রাখবেন ।’
প্রসঙ্গত, সন্দেশখালীর বাসিন্দারা শুধু সেখ শাহজাহান ও ও তার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগই তোলেননি, পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সবকিছু জেনে শুনেও পুলিশ কার্যত মুখ ঘুরিয়ে ছিল । এমনকি তৃণমূল নেতাদের কুকর্ম আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন তারা পুলিশের বিরুদ্ধে । যে কারণে পুলিশের উপর ভরসা না রেখে আদালতে গিয়ে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন এক নির্যাতিত মহিলা । রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে সন্দেশখালি বাসিন্দাদের পুলিশের উপর কোনো ভরসাই নেই । স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, শাহজাহান, শিবু ও উত্তমের কুকর্ম সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে একাধিকবার তারা থানায় গিয়েছিলেন । কিন্তু পুলিশ তাদের অভিযোগ না নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে । শিবু উত্তম দাবি করে বেড়াত পুলিশ নাকি তাদের পকেটে । স্থানীয়দের আশঙ্কা যে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ ভয় দেখিয়ে তাদের বয়ান বদল করতে বাধ্য করত ।
এদিকে শিবু উত্তম গ্রেপ্তার হলেও মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান এখনো নাগালের বাইরে । এ নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন । যদিও রাজ্য পুলিশের ডিজি শাহজাহানকে গ্রেপ্তারির বিষয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের ওপরেই দায় চাপিয়ে দিয়েছেন । শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে ডি জি বলেন,’শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইডি অভিযোগ দায়ের করেছে। তাহলে ইডি কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি ?’ তিনি জানান যে গত ৬ ফেব্রুয়ারীর আগে সন্দেশখালি নিয়ে কোনও অভিযোগই দায়ের হয়নি । যদিও সূত্রের খবর, এনিয়ে মোট ১৭ টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৯ টি শ্লীলতাহানির মামলা । তবে এখনও শাহজাহানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি । কারণ সাজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলে তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের নিশানায় চলে আসত অভিযোগকারী বা অভিযোগকারিণী এবং সেক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা পর্যন্ত তারা পেতো না বলে মনে করছেন গ্রামবাসীরা ।।