এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,১৫ ফেব্রুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি ‘কুখ্যাত’ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান চম্পট দেওয়ার পর থেকেই হাড় হিম করা সন্ত্রাসের ছবি উঠে আসছে । নিরীহ গ্রামবাসীদের জমি জায়গা দখল থেকে শুরু করে গভীর রাতে মহিলাদের বাড়ি থেকে ডেকে পার্টি অফিসে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠছে শেখ শাহজাহান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে । বহু মহিলা তৃণমূলের এই অত্যাচারের প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন । যদিও তৃণমূলের দাবি ওই মহিলাদের বিজেপি ও সিপিএম শিখিয়ে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসছে ।
অশোকনগরের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নারায়ন গোস্বামী প্রতিবাদী মহিলাদের গায়ের রং নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এমনই প্রশ্ন তুললেন । তার কথায় আদিবাসীরা ফর্সা হয় না কিন্তু ক্যামেরার সামনে আসা মহিলাদের গায়ের রং ফর্সা । বিজেপি ও সিপিএম তাদের শিখিয়ে পড়িয়ে ক্যামেরার সামনে নিয়ে এসেছে বলে দাবি তার । সম্প্রতি একটি শিশুর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল । শিশুটিকে তার পরিবারের উপর ঘটে যাওয়া তৃণমূল নেতাদের অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করতে দেখা গিয়েছিল ওই ভিডিওতে । কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক নারায়ন গোস্বামীর দাবি যে ওই শিশুটিকেও পর্যন্ত শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। সন্দেশখালি মহিলাদের গায়ের রং নিয়ে প্রশ্ন তোলা তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় । তিনি তিনি বিধায়কের বক্তব্যের ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আদিবাসী সম্প্রদায়কে বিচার করা হয় গায়ের রং দিয়ে ! শুনুন, তৃণমূল বিধায়কের কুরুচিকর মন্তব্য! আদিবাসী সম্প্রদায় এবং মহিলা বিরোধী এই সরকারকে ধিক্কার ।’
এদিকে সন্দেশখালিতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) নেতাদের দ্বারা নারীদের যৌন শোষণের বিষয়ে নতুন নতুন অভিযোগ সামনে আসছে । কয়েকজন মহিলা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন
এখন প্রশাসন তাদের কাছে ধর্ষণের মেডিকেল সার্টিফিকেট চাইছে । তারা এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । সেই সঙ্গে তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন । সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে মুখ ঢেকে ওই মহিলা বলেন, ‘চাকরি দিয়ে কী লাভ? আমরা আমাদের জমি এবং আমাদের সম্মান ফিরে চাই। যারা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে, জবরদস্তি করেছে, যারা মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে আমাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালাত, তা কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে?’
মহিলারা স্পষ্টতই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শাহজাহান শেখ এবং তার সহযোগী শিবু হাজরা ও উত্তম সরদারকে অভিযুক্ত করেছেন। মহিলারা জানান, তারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বাড়ির জানালা-দরজা থেকে গুণ্ডারা হুমকি দেয়। তারা গেটে টর্চ জ্বালিয়ে দরজা ধাক্কা দেয়। মহিলারা তাদের জীবনহানীর ভয় প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে তারা রাজ্যের পুলিশকে বিশ্বাস করেন না ।
এসব অভিযোগের মধ্যেই পুলিশ ও জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছেও অভিযোগ এসেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের একটি দ্বীপে অবস্থিত সন্দেশখালীর নারীরা শুধু ধর্ষণের অভিযোগই করেনি, বরং লাঞ্ছিত, জমি দখল, শ্লীলতাহানি, প্রাণনাশের হুমকি এবং বকেয়া টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও এনেছে।
এদিকে এই সমস্ত অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে শাহজাহানের ডান হাত শিবু হাজরা । পুলিশ দাবি করছে শিবু নাকি ফেরার, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সে গোপন ডেরা থেকে একটা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে । তার কথায়,’সবটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ। সিপিএমের নিরাপদ সর্দার এবং বিজেপির বিকাশ সিনহা পুরো ঘটনার পিছনে রয়েছে । ইচ্ছাকৃত ভাবে বিজেপি- সিপিএমকে একজোট করে এই ঘটনা করা হচ্ছে বলেও দাবি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবুর ।মহিলাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে শিবুর দাবি, দলের মিটিং থাকলে খবর দেওয়া হত। কিন্তু কখনই কোনও মহিলাকে রাতে ডাকা হত না। এমনকি রাতে পার্টি অফিসে কাউকে জোর করে আটকে রাখা হয়নি বলেও দাবি তার । তুই এখনো আশাবাদী যে এলাকায় তৃণমূলের ঘাঁটি আরও শক্ত হবে ।
শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা,উত্তম সরদারসহ একাধিক তৃণমূল নেতার গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল হয়েছে সন্দেশখালি । পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয় । কলকাতা হাইকোর্ট ১৪৪ ধারা খারিজ করে দিলেও সন্দেশখালির বেশ কয়েকটি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে পুলিশ । শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরার বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ থাকলেও মমতা ব্যানার্জি এখনো পর্যন্ত ওই সমস্ত দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি । এমনকি এক মাস কেটে গেলেও শাহজাহান শেখের নাকি কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি পুলিশের । যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ শাহজাহান এলাকাতেই আছে
এমনকি পুলিশের চোখে পলাতক শিবুও । কিন্তু সেই শিবুই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বহাল তবিয়তে ফোনে কথা বলেছে । গ্রামবাসীদের সন্দেহ লোকসভা নির্বাচনে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করতে শাহজাহান-শিবুদেরই কাজে লাগাতে চাইছেন মমতা-অভিষেক ।।