দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১০ ফেব্রুয়ারী : কম্বল ফেরি করার অছিলায় এলাকায় ঘুরে ঘুরে এলাকায় রেইকি করে যেত দুষ্কৃতীদের একটা দল । তারপর গভীর রাতে একের পর এক সোনারূপোর দোকানে হানা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার গহনা ও নগদ হাত সাফাই করে উধাও হয়ে যেত তারা । পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার একের পর এক সোনারুপোর দোকানে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও দুষ্কৃতিদের ওই চক্রটির কোন হদিস করতে পারছিল না পুলিশ । অবশেষ এল সফলতা । কাটোয়া থানা পুলিশ উত্তরপ্রদেশের ওই চক্রটির দুজন মহিলাসহ ৭ সদস্যকে পাকড়াও করেছে ।
পুলিশ ধৃতদের দশরথ সিং ওরফে দারা সিং, হাকিম সিং, ছেবিরাম সিং, রামবাবু সিং, ব্রিজপাল সিং, বাসন্তী দেবী খাসুয়া এবং মীনাদেবী বলে চিহ্নিত করেছে । ধৃতদের মধ্যে ছেবিরাম ও রামবাবুর বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বাদাউন জেলায়। বাকিদের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আরাইয়া জেলায় । পুলিশ উদ্ধার করেছে চুরি যাওয়া ৪৫০ গ্রাম সোনার গহনা, নগদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, ১১ টি মোবাইল ফোন, ৫ টি দেশি পাইপগান, ৪০ রাউন্ড গুলি, বেশকিছু রূপোর গহনা এবং ৬ টি সাইকেল । এছাড়া শাবল, রড, করাত, জগ, হাতুরি,ছেনি প্রভৃতি চুরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ ।
সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় মন্দির ও সোনার রুপোর গহনার দোকানে চুরির ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে । ভাতার থানার কামারপাড়া এলাকা, কেতুগ্রাম,কাটোয়া প্রভুতি এলাকায় একের পর এক সোনারূপোর দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে । গত সপ্তাহে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে একটি গহনার দোকানের লোহার গ্রিল ও কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার সামগ্রী চুরি করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীদের একটি দল । দুষ্কৃতীদের দোকানে হানা দেওয়ার দৃশ্যটি স্থানীয় একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে যায় । সেই সূত্র ধরে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ । শেষে কাটোয়ার শহরের কেশিয়া মিলপাড়া এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ওই একটি দলটিকে পুলিশ চিহ্নিত করে । তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় চুরি করা সামগ্রী এবং চুরির করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে যে সাইকেলে চড়ে কম্বল বিক্রির নামে এলাকায় ঘুরে ঘুরে রেইকি করত ওই দলটি । দলের দুই মহিলা সদস্যও রান্নাবান্নার কাজের পাশাপাশি রেইকি করে বেড়াতো । তারা নির্দিষ্ট দোকানকে চিহ্নিত করে রাতের বেলায় সেখানে দল বেঁধে হানা দিতো । তারা সাথে নিয়ে যাওয়া জক দিয়ে সার্টার ভাঙ্গত,লকার কাটাত অন্য একটা যন্ত্র দিয়ে,করাত দিয়ে কাটত দোকানের তালা ।
বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের এই দলটি ঘুরে ঘুরে কম্বল ফেরি নাম করে একের পর এক সোনারূপোর দোকানে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছিল । সিসিটিভি ফুটেজ এবং সোর্স মারফত ওই দলটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে । দলটির দুজন মহিলা সদস্য সহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।’ তিনি জানান,জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে সাত উত্তরপ্রদেশের ওই গ্যাংয়ের আটজনের ওই দলটি কাটোয়ায় ঘরভাড়া নিয়ে থাকছিল । তারা পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার, পূর্বস্থলী, কেতুগ্রাম ছাড়াও মুর্শিদাবাদ জেলাতেও সোনার দোকানে চুরির ঘটনায় জড়িত বলে জানা গেছে । ধৃতদের জেরা করে দলের আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ।
শুক্রবার রাতে ওই দলটিকে গ্রেফতারির পর আজ শনিবার তাদের কাটোয়া মহকুমা আদালতে পাঠায় পুলিশ । বিচারক তাদের ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন । পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জেরা করে ওই চক্রের বাকি সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে ।।