প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ মে : ছেলে মারা যাওয়ায় শোকে একই দিনে মৃত্যু হল মায়ের । মর্মান্তিক এই ঘটনাটি রবিবার ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার আবুজহাটি ২ পঞ্চায়েতের চক গ্রামে । মৃতরা হলেন ছেলে অম্বুজাক্ষ্য চট্টোপাধ্যায় (৭৬) ও মা বিশ্বেশ্বরী চট্টোপাধ্যায় (৯৪)। একই দিনে মা ও ছেলের মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হতেই চক গ্রামের বাসিন্দা মহলে শোরগোল পড়েযায় । ঘটনা চাক্ষুষ করতে অনেকেই ভিড় জমান ব্রাহ্মন বাড়িতে ।পরে দুপুরে গ্রামের শ্মশানে পাশাপাশি চিতায় সৎকার করা হয় মা ও ছেলের মৃতদেহ । একই দিনে মা ও ছেলের এমন মৃত্যু আক্ষরিক অর্থেই নজিরবীহিন বলে এদিন মন্তব্য করেন চক গ্রামের বাসিন্দারা ।
আবুজহাটির কুলিনগ্রাম সংলগ্ন চকগ্রামে বসবাস চট্টোপাধ্যায় পরিবারের । গ্রামবাসী মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন ,অম্বুজাক্ষ্য চট্টোপাধ্যায় একসময়ে মুহুরির কাজ করতেন । তা দিয়ে সামান্য যে টুকু রোজগার হত তা দিয়েই তিনি সংসার চালাতেন ।অম্মুজাক্ষ্য বাবুর ছেলে মুকুল ও স্ত্রী আল্পনাদেবীও মানসিক ভাবে সুস্থ নন। গত বছর লকডাউনের পর থেকে অম্বুজাক্ষ বাবুর মুহুরির কাজ করাও তাঁর হয়ে যায় । বর্তমানে অম্মুজাক্ষ্য বাবু ও তাঁর মা বৃদ্ধ ভাতার যে সামান্য টাকা পেতেন তা দিয়েই কোন রকমে তাঁদের দিন গুজরান হত । ইদানিং বয়সজনিত কারণে অম্বুজাক্ষ্য বাবু ও তাঁর বৃদ্ধা মা বিশ্বেশ্বরীদেবী শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন । অম্বুজাক্ষ বাবুর এক ভাই হুগলীর গুড়াপে ও অপর এক ভাই চক গ্রামেই আলাদা বাড়িতে বসবাস করেন । মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন,আর্থিক অনটনের কারনে মা ও ছেলে কেউই তাঁদের শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা টুকু করাতে পারছিলেন না । সামান্য বৃদ্ধ ভাতা আর শুভানুধ্যায়ী ও পরিজনরা যে টুকু সাহায্য সহযোগীতা করতো তা দিয়েই চলতি অংশিক লকডাউনে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সকলের দিন গুজরান হচ্ছিল। গ্রামবাসী মৃত্যুঞ্জয় বাবু আরও জানান এদিন সকালে বাড়িতেই মারা যান অম্বুজাক্ষ্য বাবু। ছেলের মৃত্যুতে শোকাতুর হয়ে পড়েন বৃদ্ধা মা । ছেলে মারা যাওয়ার ঘন্টা দুয়েক বাদ বৃদ্ধা মা বিশ্বেশ্বরীদেবীও হার্টফেল করে মারা যান । ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য চড়িয়ে পড়ে। ঘটনা চাক্ষুষ করতে অনেকেই ব্রাহ্মন বাড়িতে হাজির হন ।মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন , এদিন দুপুরে মৃতদের পরিজন ও এলাকাবাসীদের সহযোগীতায় গ্রামের শ্মশানে পাশাপাশি চিতায় মা ও ছেলের মৃতদেহ সৎকার করা হয়।গ্রামবাসীরা বলেন , অম্বুজাক্ষ্য বাবুর স্ত্রী ও ছেলে আগামীদিনে কিভাবে দিন চালাবেন সেটাই এখন দুঃশ্চিন্তার বিষয় ।মৃতদের পরলৌকিক কাজকর্ম সম্পাদনের মতো আর্থিক সামর্থ টুকুও পরিবারের নেই ।এই অবস্থায় ব্রাহ্মন পরিবারটির জন্যে সকলের কাছে সাহায্য সহযোগীতা প্রার্থনা করেছেন চক গ্রামের বাসিন্দারা ।।