জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,পাইকপাড়া,০৯ ফেব্রুয়ারী : শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী এক বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকতে চলেছে বাংলা তথা সমগ্র চিকিৎসা মহল। সমস্ত কুসংস্কার দূর করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য কলকাতার পাইকপাড়ার সুকুমার হোম চৌধুরীর দেখানো পথ ধরে পরিবারের একে একে ৫ জন সদস্যের মরণোত্তর দেহদান করা হয়ে গেছে। পারিবারিক রীতি মেনে আরজিকর হাসপাতালের এনাটমি বিভাগের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে সুব্রত বাবুর প্রয়াতা কন্যা তৃপ্তি চৌধুরীর মৃতদেহ। ইতিমধ্যে ‘দিশা’র পক্ষ থেকে তাঁর কর্নিয়া দুটি সংগ্রহ করা হয়। তাঁর মৃতদেহ তিলজলা থানার পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা আছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের ১৮ ই জানুয়ারি সুব্রত বাবুর মৃতদেহ ওনার ইচ্ছানুযায়ী আরজিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং অন্যান্য সদস্যরাও মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। আজ শুক্রবার সকাল ৯-২০মিনিট নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিং হোমে মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ও ‘গণদর্পণ’-এর অন্যতম রূপকার তথা প্রথম চেয়ারপার্সন তৃপ্তি চৌধুরীর দেহাবসান হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি ছিলেন অপুত্রক।
মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রয়াত ব্রজ রায়ের সহধর্মিনী প্রয়াতা তৃপ্তি চৌধুরী বিখ্যাত বিপ্লবী অনন্ত সিং এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি কারারুদ্ধ হন। পঞ্চাশের দশকে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের নাট্য তথা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি বেশ কিছু নাটক রচনা করেছেন। গণনাট্য সংঘের পক্ষ থেকে তাঁর রচিত বহু নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। তিনি নিয়মিত অভিনয়েও অংশগ্রহণ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পি এন্ড টি বিভাগে চাকরি সূত্রে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল গৌরী।
‘গণদর্পণ’-এর পক্ষ থেকে মণিষ সরকার বললেন, ‘তৃপ্তি দেবীর মৃত্যুতে মরণোত্তর দেহদান আন্দোলন যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমাদের সকল সদস্য ও শুভানুধ্যাযায়ী খুবই মর্মাহত।’পরিবারের পক্ষ থেকে তৃপ্তি দেবীর ভাই তুহিন বাবু বললেন – দিদির ইচ্ছানুসারে তাঁর দেহ আমরা আরজিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেব। তিনি আরও বললেন – আমাদের পরিবারের সমস্ত সদস্য মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা চাই একইভাবে অন্যরাও এগিয়ে আসুক। এরফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে।।