দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০৯ ফেব্রুয়ারী : মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে হাতে গোনা দু’একটা হিন্দু পরিবারের বসবাস ৷ ওই হিন্দু পরিবারগুলির মধ্যে এক অসুস্থ প্রৌঢ়ের মৃত্যু হলে লোকবলের অভাবে দেহ সৎকার করা নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের অতান্তরে পড়তে হয় । শেষ পর্যন্ত মৃত প্রৌঢ়ের মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে এলেন মুসলিম প্রতিবেশীরা । পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার সিমুলগাছি গ্রামের গণেশ হাজরার বাঁশের দোলায় কাঁধ দিতে এগিয়ে এলেন মিরাজ শেখ,মহিজউদ্দিন খান,সোনু মল্লিক, জামরুল মল্লিকরা । সনাতনি রীতি মেনে বৃহস্পতিবার সিমুলগাছি সংলগ্ন পূর্বস্থলীর পাটুলির শ্মশান ঘাটে সম্পন্ন হল প্রৌঢ়ের দেহ সৎকারের কাজ ।
জানা গেছে,সিমুলগাছি গ্রামে একটি অলিখিত নিয়ম আছে । ওই নিয়ম অনুযায়ী গ্রামে কারোর মৃত্যু হলে
সৎকার্যের খরচ বাবাদ প্রতি পরিবারকে ৬০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় । দুঃস্থ প্রৌঢ় গণেশ হাজরার মৃত্যুর পরেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি । গণেশবাবুর মৃত্যুর পর গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা হয় । তারপর বাড়ি বাড়ি চাঁদা সংগ্রহ করা হয় ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,কাটোয়া-২ ব্লকের সিঙ্গি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শিমুলগাছি গ্রামের বাসিন্দা গণেশ হাজরার পেশায় খেতমজুর ছিলেন । বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর বাম পা ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে । তারপর থেকেই তিনি শয্যাশায়ী হয়ে যান । এদিকে স্ত্রীরও মৃত্যু হয় । তার আগে বিয়ে হয়ে যায় গনেশবাবুর চার মেয়ের । তাদের শ্বশুরবাড়ি অনেক দূরে । সম্পর্কীয় এক বউদি মূলত গনেশবাবুর দেখাশোনা করতেন । সম্প্রতি গুরুতর শারিরীক অসুস্থতায় ভুগছিলেন গনেশবাবু । বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর ।
মিরাজ শেখ,মহিজউদ্দিন খানরা বলেন,’আমরা ফোন করে গনেশবাবুর মৃত্যুর খবর তাঁর মেয়েদের জানিয়েছিলাম । কিন্তু দুরত্বের কারনে তাদের সিমুলগাছি গ্রামে আসতে অনেক সময় লেগে যাবে । সেই কারনে গনেশবাবুর মেয়েদের অনুমতি নিয়েই তাঁর দেহ সৎকার করতে উদ্যোগী হই আমরা ।’
জানা গেছে, মেয়েদের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পরে বাঁশের দোলা তৈরি,সাদা থান, ধুপসহ সৎকারে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনেন গনেশবাবুর মুসলিম প্রতিবেশীরা । তারপর তারা বাঁশের দোলা কাঁধে করে দেহ নিয়ে যান সিমুলগাছি সংলগ্ন পূর্বস্থলীর পাটুলির শ্মশান ঘাটে । দেহ সৎকারের পর গভীর রাতের দিকে বাড়ি ফেরেন শবযাত্রীরা ।।