এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),৩১ মে : আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে জনমজুর পরিবারের বসবাস। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের পড়ুয়াদের কাছে স্মার্টফোন অলীক কল্পনা। এদিকে করোনা আবহে স্কুল এক বছরের ওপর বন্ধ। তাহলে আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারগুলির শিশুদের পঠনপাঠন কি করে সম্ভব? কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় । আর সেই মুসকিল আসান করছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের ঝুঝকোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা প্রাথমিক স্কুলের তরুণ শিক্ষক মিসকিন মণ্ডল । এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন ক্লাস করাচ্ছেন তিনি। আর মিসকিন মণ্ডলের এই অনলাইন ক্লাসে রীতিমতো উৎসাহিত পড়ুয়ারা। আশ্বস্ত তাদের অভিভাবকরা।
ঝুঝকোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মিসকিন মণ্ডল মেনাডাঙ্গা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্কুল সূত্রে জানা যায় মোট পাঁচজন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন স্কুলে। পড়ুয়ার সংখ্যা ১২০ জন। ঝুঝকোডাঙ্গা, বামুনাড়া এবং মেনাডাঙ্গা এই তিন গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা মূলত মেনাডাঙ্গা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় মেনাডাঙ্গা গ্রামের অধিকাংশ পরিবার দিনমজুরি করেন। সকালবেলায় বাবা মায়েরা কাজে চলে যান ছেলেমেয়েদের বাড়িতে রেখে। করোনা আবহে স্কুল বন্ধ। এই অবস্থায় কচিকাঁচা পড়ুয়াদের সারাদিন ঘুরে ঘুরে দিন কাটে। পঠনপাঠন হচ্ছে কিনা দেখাশোনার কার্যত কেউ নেই। মিসকিন মণ্ডল বলেন,” এই অতিমারী পরিস্থিতিতে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের পড়ুয়ারা পড়াশোনা বিমূখ হয়ে পড়ছিল। কিন্তু কড়া বিধিনিষেধের কারনে তাদের পাড়ায় পৌছে গিয়ে পড়াশোনা করানোও সম্ভব হচ্ছে না। আবার ওই সমস্ত পরিবারের কাছে স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করানোও সম্ভব নয়। তাই অন্য উপায়ে পড়াশোনা ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
কি সেই ব্যবস্থা? মিসকিন মণ্ডল জানান তিনি এনিয়ে আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়ায় তাদের স্কুলের প্রাক্তন পড়ুয়াদের কাছে সাহায্য চান। যেসব ছাত্র কিছু না কিছু কাজ করেন। তাদের কাছে স্মার্টফোন আছে। মিসকিন বলেন,” প্রায় ৭ – ৮ জন প্রাক্তন পড়ুয়াদের নিয়ে একটি গ্রুপ করা হয়েছে। তাদের পালা করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই প্রাক্তন ছাত্রদের স্মার্টফোনের সাহায্যে মেনাডাঙ্গা আদিবাসী পাড়ার পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়া শুরু করেছি। চলছে অনলাইন ক্লাস।
মেনাডাঙ্গা আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা রোহিত সোরেন, দেবু সোরেনরা বলেন,” মিসকিন স্যার আমাদের গ্রামের পড়ুয়াদের পড়াশোনার বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী।অনলাইনে ক্লাসের জন্য স্যার আমাদের কাছে সহযোগিতা চান। আমরা সহযোগিতা করছি। মিসকিন স্যারের জন্যই আমাদের পাড়ার ভাইবোনেরা ফের পড়াশোনায় মন দিয়েছে।’।