সন্ধ্যা হয়ে গেছে তুলসী তলায় প্রদীপ দেখাতে হবে। বাড়িতে রাধাকৃষ্ণের মন্দির। সেখানেও পুজো দিতে হবে। কাল গণিত পরীক্ষা। একটু বইয়ের সামনে না বসলে কি করে হবে!
বাড়ির মানুষগুলোও এমন! পরীক্ষা আরম্ভ হবার এক সপ্তাহ আগে মনি সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে। দুই সপ্তাহ, মন্দিরে পুজোর দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়ার জন্য।
কারো মাথা ব্যথা, কারো কোমরে ব্যথা, কারো কাজের চাপ। নানান অজুহাত দেখিয়ে সবাই এড়িয়ে গেছে।
কি আর করবে মনি! নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ১৫ বছর বয়সে অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসেছে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের বউ হয়ে কাজের লোকের ন্যায় খেটে চলছে। মনির এখন কুড়ি বছর বয়স। অনেকটা বুঝতে শিখেছে। এই প্রথমবার সবার বিরুদ্ধে গিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিল। পড়াশুনা করে গ্রাজুয়েট হবে।
কিন্তু মনির শ্বশুর বাড়ির উচ্চশিক্ষিত মানুষগুলো প্রতিনিয়ত মনির সাথে অশিক্ষিতের মত আচরণ করছে। তারা সবাই চাইছে মনি সারা জীবন তাদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকুক। তাই পড়াশুনার ব্যাপারে সবার এত আপত্তি! ভাসুর, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ – কেউ চাইছে না মনি পড়াশোনা করুক। সমস্ত কাজকর্ম গুছিয়ে সব্বাইকে রাতের খাবার খাইয়ে রাত দশটার পরে পড়তে বসতো মনি।
পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর সময় চলে আসছে। সবাই মনিকে নানাভাবে উপহাসমূলক কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছে, “পন্ডিত বাড়ির বিড়ালটাও আড়াই অক্ষর লেখে”। কেউ বলছে, “এবছর চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ সব পাস করবে”। হাতে কাজ আর চোখে জল ছাড়া মনির পাশে আর কেউ নাই।
রেজাল্ট বেরোনোর দিন বেলা ১২টা নাগাদ মনি স্বামীকে বলে, “আমার রোল নাম্বারটা নিয়ে দেখবে একটু “।সে এক কথায় উত্তর দিল, “ওইসব আমাকে দিয়ে হবে না”। মনির চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। মুখটা আঁচলে ঢেকে নিজের ঘরে চলে গেল ।
কিছুক্ষণ বাদে মনির স্কুল থেকে সুশান্ত স্যার ফোন করে মনির স্বামীর মোবাইলে। মনির কোন পার্সোনাল ফোন ছিল না। মনি পরীক্ষায় এ-গ্রেড পেয়ে পাস করেছে। ৭৫℅ নাম্বার পেয়েছে ।।