প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ ফেব্রুয়ারী : ছিল কমিউনিটি হল। তাকেই আবার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হয়। সোমবার সেই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে গিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়লেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পুরসভার পুর প্রধান স্বপন বিষয়ী।শেষে উদ্বোধন শিকেয় তুলে দিয়ে নিরাশ হয়েই মেমারির স্বস্তেরপাড় এলাকা থেকে ছাড়তে হয় পুরপ্রধানকে। এ নিয়ে মেমারির শাসক দলের একাংশের পাশাপাশি বিরোধীরাও তীর্যক কাটাক্ষে বিঁধেছেন পুরপ্রধানকে ।
মেমারি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইছাপুরের স্বস্তেরপাড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে একটি কমিউনিটি হল।স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের সামাজিক নানা অনুষ্ঠান সেখানেই সারেন। এক তলার কমিউনিটি হলকে দোতলা করা হয়। স্থানীয়রা বলেন, দোতলা করার সময় পুর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস ছিল, একতলায় কমিউনিটি হলই থাকবে। আর দোতলায় তৈরি হবে ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’। পুর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ছিলেন এলাকার সকল বাসিন্দা। কিন্তু পুরকর্তৃপক্ষ যে আশ্বাস দিয়েছিল তা না করে কমিউনিটি হলকে সরিয়ে পুরো ভবনটাই ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলে। তাতেই ক্ষোভের পারদ চড়ে স্বস্তেরপাড় এলাকার সকল বাসিন্দাদের । সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটে এ দিন দুপুরে।
মেমারি পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুনীল মুর্মু সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে গেলে এলাকার সকল বাসিন্দারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁকে ঘেরাও করে রেখে স্থানীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন,“পুরসভা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। কমিউনিটি হল অটুট রেখে তার দোতলায় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুললে কারওর কোনও আপত্তি থাকবে না।যদি সেটা না করা যায় তবে কমিউনিটি হলকে রেখে পাশের কোনও খাস জায়গাতে পুরসভা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলুক । তাতে কারুর কোন আপত্তি থাকবে না।”
সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এলাকার মানুষজন তো চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন,তাহলে আপত্তি কিসের? এ প্রশ্নের উত্তরে এলাকাবাসীর বক্তব্য,”তাঁদের এলাকায় কোনও কমিউনিটি হল নেই। অন্নপ্রাশন,বিয়ে, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক কাজে তাঁরা কমিউনিটি হলটিকেই ব্যবহার করেন। সেটাকে পুরোপুরি বন্ধ করেে দেওয়া হলে সবারই সমস্যা হবে। কমিউনিটি হলটিকে বাঁচিয়ে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি করা যেতেই পারতো। আমরা এলাকায় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার পক্ষে নই । কমিউনিটি হলটাকে বাঁচিয়ে রেখে এলাকার কোন খাস জমিতে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হোকনা। কেন আপত্তি করবো না বলে বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীরা মন্তব্য করেন।“
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্যে মেমারি পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুনীল মুর্মু যদিও পরিস্থিতি বুজে এলাকাবাসীর পাশেই দাঁড়িয়ে যান । তিনি বলেন,“আমি স্থানীয়রা দাবির সঙ্গে একমত“।
আর জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এ নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন,“আসলে তৃণমূলের উন্নয়নটা হচ্ছে আনেকটা ’ওল্ড ওয়াইন ইন এ নিউ বটলের’ মত ব্যাপার । কমিউনিটি হলকে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র বানিয়ে দেবার পরিকল্পনাটাও সেই রকমই । গোটা রাজ্যে এই রকম নিদর্শন বহু আছে বলে মৃত্যুঞ্জয় বাবু মন্তব্য করেন“।অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেমারির পুরসভার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এই নেতার কটাক্ষ ,“পুরপ্রধানের চালাকি ধরে ফেলে তাঁকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন স্বস্তেরপাড় এলাকার বাসিন্দারা“।।