এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),০৫ ফেব্রুয়ারী : দলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অত্যাচারে গ্রাম ছাড়া হতে হয়েছিল ! বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান শেখ হাসনাবানু বেগম ও তার পরিবারকে । তারপর থেকেই তাদের অস্থায়ী জীবন কাটছে বর্ধমান শহরের একটা ভাড়াবাড়িতে । কিন্তু বাড়িতেই রয়ে গেছে জরুরী সব নথিপত্র । আর সেই সমস্ত নথিপত্র আনতে গিয়েই তৃণমূলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লোকজনদের হাতে বেদম ধোলাই খেতে হল হাসনাবানু বেগমের দেবর শেখ সাবির আলিকে । তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে দু’পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে । পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করায় এবং পরে তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । এদিকে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক মুখেই মঙ্গলকোটে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের মাথাচাড়া দেওয়ায় ভাবাচ্ছে শাসকদলের নেতৃত্বকে ।
মঙ্গলকোট ব্লকের কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসনাবানু বেগমের স্বামী শেখ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রায় সাতমাস ধরে আমরা ঘরছাড়া । আমাদের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে গেছে । আর সংসার চালাতে পারছি না । তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে চেন্নাই গিয়ে শ্রমিকের কাজ করব । কিন্তু সেখানে যেতে গেলে ভোটার কার্ড,আধার কার্ড লাগবে । ওই সমস্ত নথিপত্র সব বাড়িতেই পড়ে আছে । তাই আমার খুড়তুতো ভাই শেখ সাবির আলি সেগুলো রবিবার দুপুরে আনতে গিয়েছিল । আর তখনই তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয় ।’ তার আরো অভিযোগ যে গ্রামছাড়া হওয়ার পর তাদের আড়াইবিঘা জমিতে জোর করে ধানচারা রুইয়ে দিয়ে জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে । এই ঘটনায় মঙ্গলকোট অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি রহিম মল্লিকের দ্বিতীয় অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি ।
জানা গেছে,২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর শেখ হাসনাবানু বেগমকে মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত করা হয়েছিল । কিন্তু ২০২৩ সালে চিত্র বদলে যায় । মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতের বর্তমান উপপ্রধান তথা মঙ্গলকোট অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি রহিম মল্লিকের হাতে দলের যাবতীয় কর্তৃত্ব চলে যায় । তিনি হাসনাবানু বেগমকে আর টিকিট না দিয়ে নিজের পছন্দমত ব্যক্তিদেরকে প্রার্থী করেন । এদিকে ভোটে জেতার পরই হাসনাবানু বেগমদের উপর শুরু হয় অত্যাচার । তার জেরেই গোটা পরিবারটিকে গ্রাম ছাড়া হতে হয় । তখন থেকেই গ্রাম ছাড়া রয়েছেন তার স্বামীর খড়তুতো ভাই শেখ সাবির আলিও । কিন্তু রবিবার বাড়িতে নথিপত্র নিতে এসে আক্রান্ত হতে হয় তাকে।
ঘটনার পর আক্রান্ত শেখ সাবির আলির বোন সাবিনা শেখ মঙ্গলকোট থানায় একটি এফআইআর রজু করেন । তার ভিত্তিতে রহিম মল্লিক ঘনিষ্ঠ কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা বদরুল শেখ ও মারফত আলি মল্লিক নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । যদি ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন রহিম মল্লিক ।।