এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,০২ ফেব্রুয়ারী : মুখ্যমন্ত্রীর মালদা সফরের ২৪ ঘন্টা আগে ইংলিশবাজারের উত্তর বালুচর এলাকা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সৃষ্টি কেশরী(১০) । পরে তার ধর ও মুণ্ড দুই পৃথক জায়গা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ । এই ঘটনায় মালদার ইংলিশবাজার থানার পুলিশের বিরুদ্ধে গাফেলতির অভিযোগ তুললেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করতে নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশ গাফেলতি করেছে বলে অভিযোগ তাঁর ।
শুভেন্দু অধিকারী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ইংলিশ বাজারের বিজেপি বিধায়িকা শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর একটি পোস্টকে শেয়ার করে লিখেছেন,’২৯ জানুয়ারী মালদায় নিখোঁজ হয় ১০ বছরের একটি শিশুকন্যা । তার পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে অবহিত করে এবং জনসাধারণের কাছে আবেদন জানায় । যাইহোক, মুখ্যমন্ত্রীর আকস্মিক সফরের ব্যবস্থা করতে মমতা পুলিশ ব্যস্ত ছিল, কারণ মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিকভাবে নিরাপত্তাহীন বোধ করছিলেন । দুর্ভাগ্যবশত মেয়েটির বিকৃত ও ছিন্নভিন্ন লাশ পরে পাওয়া যায়। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে মেয়েটিকে বাঁচানো যেত। এই হল পশ্চিমবঙ্গের জননিরাপত্তার অবস্থা। সাধারণ জনগণের সমস্যা নিয়ে পুলিশের কোনো মাথাব্যথাই নেই ।’
বিজেপি বিধায়িকা শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর ওই পোস্টে লিখেছেন,’আইনহীন বাংলা। নিরাপত্তাহীন মেয়েরা!
আমার বাড়ির ঠিক সামনে…বটতলা, উত্তর বালুচোর, ইংরেজবাজার, এই ভয়ঙ্কর অপহরণ, লাঞ্ছনা এবং এক কিশোরীকে হত্যার সাক্ষী!
রাজ্য পুলিশ যখন ব্যস্ত ছিল, গত ২ দিন, পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্ষা করতে তার ইংরেজ বাজার, মালদহ সফরের সময়, এই ভিডিওটি সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ১০ বছর বয়সী এই ছোট্ট মেয়েটির বাড়ির চারপাশে কী ঘটছিল তা প্রকাশ করে, যে ২৯ জানুয়ারী সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ এবং যার ছবি এবং পরিবারের নম্বর কয়েক মিনিটের মধ্যে এফবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় সাথে সাথে বাবা তার নম্বরটি প্রকাশ করেন এবং সর্বসাধারণের সাহায্য চান। কেশরী পরিবার পুলিশকে সন্দেহভাজনদের নাম দিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ স্ক্যান করেছে; সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ৩০ জানুয়ারী আটক করা হয়েছিল কিন্তু পুলিশ মেয়েটির সন্ধান করার সময় পায়নি, কারণ তারা বলেছিল যে তারা মুখ্যমন্ত্রীর মালদা সফরে ব্যস্ত ছিল ! অবশেষে মেয়েটিকে বাঁচাতে বা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ! এসপি অফিস থেকে কয়েক গজ দূরে ফার্ম থেকে গভীর রাতে তার ছেঁড়া ছেঁড়া নির্মমভাবে লাঞ্ছিত লাশ উদ্ধার করা হয়! এখন অপেক্ষা হাসপাতালে, নিঃশব্দ শিশুর ছেঁড়া লাশ নেওয়ার। এমনই করুণ অবস্থা বাংলার। পরিবার, সাধারণ জনগণ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা যারা মেয়েটির সন্ধানে কোন কসরত রাখেননি ।এটা সত্যিই দুঃখজনক, কারণ আমাকে একজন প্রতিবেশীর বাবার সাথে দুর্বল এবং ব্যর্থ কথোপকথনে জড়িত থাকতে হয়েছিল । সত্যিই দুঃখজনক এবং দুঃখিত।’
গত ২৯ জানুয়ারী বাড়ির সামনে থেকে ওই শিশু নিখোঁজ হওয়ার পর সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমে সন্দেহভাজন শ্রীকান্ত কেশরী(সুনু)কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে । সে খুনের কথা কবুল করলে বুধবার গভীর রাতে তাকে সঙ্গে নিয়ে মালদা শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্ব আম বাজার থেকে শিশুটির মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । পরে একটি গুদামের ছাদ থেকে উদ্ধার হয় শিশুটির কাটা মুণ্ডটি । ঘাতক শ্রীকান্ত কেশরীর বিরুদ্ধে আইপিসির ৩৬৩,৩৬৪,৩৬৫,৩০২,২০১ ধারায় পুলিশ মামলা রজু করে বৃহস্পতিবার ধৃতকে মালদহ জেলা আদালত তোলা হলে বিচারক ঘাতককে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন । চলতি মাসের ১২ তারিখে আবার অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন বিচারক । যদিও অভিযুক্তের হয়ে মালদহ জেলা আদালতে কোন আইনজীবীই দাঁড়াননি ।
এদিকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জেরে জনরোষ কাজ করছে গোটা এলাকায় । বৃহস্পতিবার দুপুরে ইংলিশ বাজার থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা । অন্যদিকে মালদা শহরের ফোয়ারা মোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় উত্তর বালুচর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা । পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মালদার ফোয়াড়া মোড়ে মৃত নাবালিকাকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল দাহ করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির যুব মোর্চার সদস্যরা। তারা রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷।