এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,৩১ জানুয়ারী : গত ২২ জানুয়ারী ভারতের ইতিহাসে একটা ঐতিহাসিক দিন ছিল । কারনে দীর্ঘ পাঁচ শতাব্দী পর তাঁবু থেকে নতুন মন্দিরে অধিষ্ঠান হল রামলালার । ওইদিনই রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় । দেশ বিদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল ওইদিন । কিন্তু কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের মেয়ে সুরণ্য আইয়ার রাম মন্দিরের উদ্বোধনের প্রতিবাদে অনশন করেছিলেন, যার পরে তিনি এখন সমস্যায় পড়েছেন । তিনি তিন দিন উপবাস করেছিলেন এবং সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছিলেন ।
সুরান্যা আইয়ার ফেসবুকে লিখেছিলেন,’নমস্কার, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় কার্যক্রমে ঘিরে দিল্লিতে আজ হিন্দু অহংকারে ভরে গেছে । একজন হিন্দু এবং একজন ভারতীয় হওয়ার কারনে আমি এতে খুবই দুঃখিত । আমার করনীয় কি তা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি । শেষ পর্যন্ত আমি আজ থেকে তিন দিনের জন্য উপবাস করবো বলে ঠিক করেছি । আমি এটা ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করার জন্য করছি । আজ দেশজুড়ে যা হচ্ছে তাতে আমি মুসলিম ভাই বোনদের এটা বলতে চাই যে আমি আপনাদের খুব ভালোবাসি । ধর্ম ও রাষ্ট্রবাদ নিয়ে যা চলছে তার আমি নিন্দা করি । এই উপবাস আমি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্যও করছি ।’ এরপর তিনি হানাদার মুঘল শাসকদের নামে তৈরি রাস্তা এবং স্বারকগুলির নাম উল্লেখ করে জানান যে এগুলি ছাড়া তার নিত্ত জীবন অসম্পূর্ণ । উপবাস সম্পূর্ণ হওয়ার পর মণিশঙ্কর আইয়ারের মেয়ে একটি ছবি শেয়ার করেছিলেন, যাতে তার মাকে মধু পান করিয়ে তাকে উপবাস ভাঙতে দেখা যায়।
এই পোষ্টের পর এখন তিনি যেখানে থাকেন সেই সমাজই তার বিরোধিতা করেছে । আবসন কর্তৃপক্ষ তাকে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে নয়তো আবাসব ছেড়ে চলে যেতে বলে একটি চিঠি লিখেছে । দিল্লির জংপুরা এলাকায় থাকেন সুরণ্যা আইয়ার। রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আরডব্লিউএ) নামে ওই আবাসন কর্তৃপক্ষ সাফ বলে দিয়েছে,’মিসেস আইয়ার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যা বলেছিলেন তা একজন শিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে অনুচিত ছিল, যার বোঝা উচিত ছিল যে রাম মন্দির ৫০০ বছর পরে তৈরি হচ্ছে এবং তাও ৫-০ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে ।’ আরডব্লিউএ সুরানিয়া আইয়ারকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে যে সমস্ত বাসিন্দারা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে এবং তাদের অনুভূতিতে আঘাত না পায় তা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব। সুরণ্য আইয়ারের ফেসবুক পোস্টের নিন্দা করে, আরডব্লিউএ বলেছে যে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিদ্বেষ ছড়ানো চলবে না, এতে কলোনির নাম নষ্ট হচ্ছে । পাশাপাশি আবাসনের নাগরিক কল্যাণ সমিতি কংগ্রেস নেতাকে সাফ বলে দিয়েছে, বাক স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেও ঢাল করার চেষ্টা করবেন না। কারণ শীর্ষ আদলতও বলে দিয়েছে, বাক স্বাধীনতারও একটা সীমা আছে।
এর আগে রোজা সম্পর্কে তথ্য জানিয়ে সুরাণ্য ফেসবুকে লিখেছিলেন,’মুঘলরা ভারতকে মূল্যবান জিনিস দিয়েছে, কারণ সুফি ও আমির খসরুর বাবা তাদের সঙ্গে এসেছিলেন। উত্তর ভারতের ভাষা ও সংস্কৃতি খসরুর কাছে ঋণী। মুঘলরা মুসলমানদের পরাজিত করে এখানে এসেছিল। বাবর পাঞ্জাবে দৌলত খান এবং দিল্লিতে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করেন। মুঘলরা রাজপুতদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। মুঘলদের নীতি ছিল মন্দির ভাঙা নয়, তারা মন্দির তৈরি করেছিল। মিথ্যা, হিংসা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার ওপর নির্মিত মন্দিরে কীভাবে সুখ গড়ে তোলা যায় ?’
উল্লেখ্য,কয়েকদিন আগে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে মণিশঙ্কর আইয়ারের দ্বিতীয় কন্যা ইয়ামিনীর সাথে যুক্ত একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ (সিপিআর) এর এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল করেছে ।’।