প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ জানুয়ারী : কেন্দ্র ’বেটি বাঁচাও বেটি পড়ায়’ প্রকল্প যেমন চালু করেছে তেমনই বঙ্গে রয়েছে “কন্যাশ্রী’ প্রকল্প ।তবুও চরম দুর্দশায় ধুঁকছে অর্ধশতাব্দি পার করা পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কৈচরের কন্যাদের পড়ার স্কুল।এমনকি স্বাস্থবিধি মেনে এই স্কুলের কন্যা ছাত্রীদের মিড-ডে খাওয়ার একটা ঘর পর্যন্ত নেই।তাই বছরের পর বছর ধরে কৈচর ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরে পাঠরত কন্যারা শ্রেণীকক্ষের বাইরে ফাঁকা মাঠে বসেই ডিড- ডে মিল খেতে বাধ্য হচ্ছে।পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘর যাতে স্কুলে হয় ,তার জন্য ’দিদিকে বলো’ থেকে শুরু করে প্রশাসনের নানা মহলেও দরবার করেছিলেন শিক্ষিকারা। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয় নি।তাই ফাঁকা মাঠে বসে মিড-ডে খাওয়াটাকেই ভবিতব্য হিসাবে ধরে নিয়েছে ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরে পাঠরত কন্যারা
বর্ধিষ্ণু গ্রাম হিসাবেই পরিচিত মঙ্গলকোটের কৈচর ।এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষজনের হাত ধরে
১৯৬৪ সালে কৈচর গ্রামে প্রতিষ্ঠা পায় ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দির।কৈচই ছাড়াও আশপাশের ক্ষীরগ্রাম, কানাইডাঙা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কন্যাদের লেখাপড়া শেখার একমাত্র অবলম্বন এই স্কুলটি। প্রতিষ্ঠা লগ্নের পর থেকে এই স্কুলটি নানা সমস্যায় জেরবার হতে থাকে।তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে কিছু সমস্যা মিটেছে।কিন্তু স্কুলের ছাত্রীরা স্বাস্থবিধি মেনে মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘর আর কিছুতেই পাচ্ছে না।নিদেনপক্ষে বসে মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা শেডও এই স্কুলে নেই।
এমন এক স্কুলে টিফিনের ঘন্টা পরলেই ছাত্রীরা থালা হাতে নিয়ে সোজা চলে যায় মিড-ডে মিলের রান্নাঘরে। যদিও ওই রান্নাঘরের অবস্থাও তথৈবচ।রান্নাঘর থেকে মিড-ডে মিল নিয়ে ছাত্রীরা সোজা চলে যায় ক্লাস রুমের বাইরে।সেখানে খোলা আকাশের নিচে ফাঁকা মাঠে দলবেধে বসে ছাত্রীরা মিড-ডে মিল খায়।শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম, এভাবেই দিন কাটে ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরের ছাত্রীদের।বর্ষা কালে বৃষ্টি নামলে একান্ত নিরুপায় হয়েই ছাত্রীরা ভাতের থালা নিয়ে হাতে নিয়ে হয় স্কুলের বারান্দায়,নয়তো ক্লাসরুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
বছরের পর বছর ধরে ছাত্রীদের এই দুর্দশা দেখে শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী সহ অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য,“তাঁরা ছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘরের জন্যে প্রশাসনের নানা মহলে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।
এমন কি ’দিদিকে বলো’ ফোন নম্বারেও ফোন করে স্কুলের ছাত্রীদের মিড- ডে মিঢ় খাওয়ার একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ রাখেন। একই দাবির কথা সামনে এনে স্কুলের এক শিক্ষিকা সমাজমাধ্যমেও সরব হন। কিন্তু এত কিছুর পরেও আজ অবধি কাজের কাজ কিছু হয় নি বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা গার্গী সামন্ত জানান। পাশাপাশি তিনি এও বলেন,’অনেক দিন আগে আমরা ব্লক অফিস থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম।সেই টাকা দিয়ে মিড-ডে মিলের রান্নাঘরটা শুধুমাত্র একটু সংস্কার করা গেছে’। অভিভাবকরা অবশ্য চাইছেন,’আর কারুর মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে শিক্ষিকারা তাঁদের বেতন থেকে কিছু কিছু করে টাকা দান করে স্কুলের ছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘরের ব্যবস্থা করে ফেললে ভাল হয় ।’
এ ব্যাপারে মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন,’ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরের পাঁচিল ও দুটি ঘর আগেই করে দেওয়া হয়েছে।ছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ার ঘর যাতে তৈরি হয় তার জন্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে। আশাকরছি সেটাও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ।’।