একটি মানুষ অলস ও কুঁড়ে হওয়া সত্বেও যে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে, সেটা লাল্টু দাকে না দেখলে কোনো দিনও জানতেই পারতাম না। পেশায় ছিলেন অটো চালক। বিয়ে থা করেননি। তারপর অটোটা বিকল হওয়ায় তেমন কিছু কাজ করতে দেখতাম না। মাঝে মাঝে অনেকেই কিছু কাজের সন্ধান দিতো। কোনো কাজই পছন্দ হতোনা। কিছু বললেই ওনার স্পষ্ট জবাব “ওই সব ছোট খাটো আমার জন্য নয়। আমি কত উচ্চ বংশের সন্তান।”
এসবের সাথে ওনার এক মহান গুন ছিলো। চা-এর দোকানে বসে আড্ডা মারা যার বিষয়বস্তু ছিল এরকম সারা জীবনে তার জীবনে যে তিনি অনেক পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু তার প্রতি ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন না হওয়ায় কোনো কাজেই বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি। সেই গল্পে সত্যতার চেয়ে যে অতিরঞ্জন বেশি ছিল সেটাই বলা বাহুল্য।
এক দিন হটাৎ শুনি লাল্টুদা কাজে নেমেছে শুধু তাই না, যে লোকটা ঘুম আর আড্ডা ছাড়া কিছু জানতোই না, সে সকাল সন্ধে সেজে গুজে কাজে বেরোয়। একদিন নিজের কৌতূহল আটকে না রাখতে পেরে বললাম,” কি গো লাল্টু দা তুমি নাকি কাজে নেমছো ! কি কাজ শুনি?” লাল্টু দা খুব গম্ভীর হয়ে বললো ” যে সে কাজ নয়, কোম্পানিতে কাজ বুঝলি! তোরা কি সব ফালতু কাজ নিয়ে আসতিস । এত দিনে মনের মত কাজ পেয়েছি।”
অনেক সন্ধান করে একদিন লাল্টু দার অফিসের হদিস পেলাম। লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে তো আমার চক্ষু চড়ক গাছ। গিয়ে দেখি অফিসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে লাল্টু দা সেই পুরনো চালে চা-এর কাপ হাতে সেই পুরনো ভঙ্গিমায় পুরনো গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে। শুনে জানতে পারলাম উনি কোনো কাজ টাজ করেন না, সবাই কে এইভাবে মোটিভেট করেন, এটাই ওনার কাজ। বলা বাহুল্য ওনার এই কাজও বেশি দিন টেকেনি, একদিন নাকি ওই কোম্পানির দারোয়ান ওনা কে ঠেঙ্গিয়ে ওখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ লাল্টু দাকে বাসায় গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়। তারপর সেই এক এ কথা ,” ওই কাজ টা বুঝলি ঠিক আমার মতো লোকেদের জন্য নয়! তোরা ঠিক বুঝবি না।”।