এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ জানুয়ারী : গত বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর পর কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগী হলে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বাধার মুখে পড়তে হয় । সংগঠনের ছাত্রছাত্রীরা সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে দাবি করে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছিল । কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন পরিবর্তনই হয়নি তার ফের একবার প্রমাণ পাওয়া গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির দ্বিতীয়বর্ষের এক দৃষ্টিহীন ছাত্রীর মৃত্যুর পর ।
জলপাইগুড়ির মালবাজারে দাদুর বাড়িতে গত ১৮ জানুয়ারী রেনেসাঁ দাস নামে ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় । এই ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র ছাত্র এবং এক গবেষকের বিরুদ্ধে গত ২৫ তারিখে মালবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার বাবা বিশ্বজিত্ দাস । পাশাপাশি তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে । অভিজিৎবাবুর অভিযোগ যে তার মেয়েকে মাদকের নেশায় জড়িয়েছিল দুই অভিযুক্ত ছাত্র ।
জানা গেছে,উচ্চমাধ্যমিকে দৃষ্টিহীনদের মধ্যে গোটা রাজ্যে প্রথম হয়েছিলেন রেনেসাঁ । অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রী জলপাইগুড়ির মালবাজারে দাদুর বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতেন । উচ্চমাধ্যমিকের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হন রেনেসাঁ। দৃষ্টিহীন ছাত্রীদের হস্টেলে থাকতেন তিনি ।
বিশ্বজিত্ দাস জানিয়েছেন,বিগত কয়েক মাস ধরেই তার মেয়ের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করছিলেন । তিনি সন্দেহ করছিলেন যে তার মেয়ে নেশায় জড়িয়ে পড়েছে । এ কারণে তিনি তার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন । এমনকি তাকে শিলিগুড়ির এক মনোবিদের পরামর্শ পর্যন্ত নিতে হয় বলে তিনি জানান । অভিজিৎবাবুর অভিযোগ যে মেয়েকে বাড়ি ফিরে নিয়ে আসা সত্ত্বেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত দুই সিনিয়র ছাত্র তার মেয়ের পিছু ছাড়েনি । দু’জন মিলে তাকে লাগাতার ফোন করে বিরক্ত করত । তার মেয়ের মৃত্যুর আগের দিনেও এক অভিযুক্ত ফোন করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের উদ্দাম জীবন যাপন নিয়ে বহুবার বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে । অভিযোগ যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদক সেবন থেকে শুরু করে উদ্দাম যৌনতা চলে । গত বছর আগস্ট মাসে র্যাগিং-এর জেরে বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর পর তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য । এই ঘটনাতেও মাদক সেবন ও উদ্দাম যৌনতার অভিযোগ উঠেছিল । স্বপ্নদীপ হত্যাকাণ্ড মামলায় বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র গ্রেফতার হয়েছে ।
সেই সময় তদন্তে উঠে আসে যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে দেদার মাদক সেবন ও উদ্দাম যৌনতার প্রসঙ্গ । এমনকি ক্যাম্পাসের ভিতরে ওপেন এয়ার থিয়েটার পরিষ্কার করতে গিয়ে সাফাইকর্মীরা বস্তা বস্তা মদের খালি বোতল উদ্ধার পর্যন্ত করেছিল । উদার হয়েছিল অগনিত কনডমের খালি প্যাকেটও । তারপরেও যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি ফের ছাত্র-মৃত্যুতে মাদকের নেশায় জড়ানোর অভিযোগ ওঠায় তার প্রমাণ পাওয়া গেল ।।