এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,২৭ জানুয়ারী : গত ২৪ জানুয়ারী, বুধবার,হেলিকপ্টারে চড়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রশাসনিক সভা করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । প্রশাসনিক সভা সেরে আবার হেলিকপ্টারে চেপেই মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় হেলিকপ্টারের বদলে সড়কপথেই মু্খ্যমন্ত্রীর কলকাতা ফেরার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বর্ধমান থেকে জিটি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি কথিত দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে দাবি করা হচ্ছে ।
মমতা ব্যানার্জির কথায়,’একটা গাড়ি প্রায় ২০০ কিমি স্পিডে যাচ্ছিল। সেটা দেখে আমার গাড়ির চালক জোরে ব্রেক কষে । তখন গাড়ির ড্যাশবোর্ডে আমার মাথা ঢুকে যায়। বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছি।’
এখন বিষয়টি বড় করে দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসপন্থী এরাজ্যের প্রথম সারির কিছু মিডিয়া । এখন প্রশ্ন,সত্যই কি ২০০ কিমি গতিতে কোনো গাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির পাশ দিয়ে গিয়েছিল ? যদি গিয়েও থাকে তাহলে এখনো পর্যন্ত গাড়িটি আটক বা গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হল কেন ?
ঠিক কি ঘটেছিল সেদিন ? মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কথিত দুর্ঘটনার মুহুর্তের ভিডিও বর্তমানে ঘুরছে হোয়াটসঅ্যাপে । ভিডিওতে দেখা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে থাকা দুটি এসকর্ট ভ্যান প্রথমে এগিয়ে যায় । সাদা রঙের গাড়ি দুটি আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ কিমি গতিবেগে ছিল । ওই দুই এসকর্ট গাড়ির থেকেও অনেক কম গতিতে যাচ্ছিল মমতা ব্যানার্জির সাদা রঙের গাড়িটি । সেই সময় একটা মোড়ের কাছে অল্প বিস্তর লোকজন জড়ো হয়েছিল । তাদের মধ্যে থেকেই জনৈক এক ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে চড়ে যাওয়ার মুহুর্ত নিজের মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ড করে রাখেন ।
ভিডিওতে দেখা গেছে,কথিত দুর্ঘটনাস্থলে রাস্তায় হালকা বাঁক রয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িটি আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ কিমি বেগে এসে ওই বাঁকের কাছে এসে সজোরে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ে । গাড়ির চালকের পাশের আসনেই বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । আচমকা ব্রেক কষায় মুখ্যমন্ত্রী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন । সেই সময় গাড়ির প্লাস্টিকের ড্যাশবোর্ডে তার মাথা ঠুঁকে যায় । মুখ্যমন্ত্রীর কথিত দুর্ঘটনার সময় পিছন থেকে একটা সাদা রঙের গাড়িকে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িকে ওভারটেক করতে দেখা যায় । কিন্তু গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে যায়নি বলেই মনে হয়েছে । আর ওই অজানা গাড়িটি ওভারটেক করার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর দাঁড়িয়ে যায় । মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে তার গাড়ির সামনে চলে আসেন এবং তারা অবাক দৃষ্টিতে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িটি পরীক্ষা করতে থাকেন । গাড়ির ভিতরে মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের কপালে হাত বোলাতে দেখা যায় ।
অনেকেই অনুমান করছেন যে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনদের সাথে কথা বলার জন্যই হয়ত মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ করে গাড়ি দাঁড় করাতে বলেন । আর তখনই চালক সজোরে ব্রেক কষেন । যেকারণে মুখ্যমন্ত্রীর কপালে অল্প আঘাত লাগে ।
এখন প্রশ্ন, এই ছোট্ট ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এবং তার সমর্থক মিডিয়া কেন বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে ? প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভার নির্বাচনের সময়েও মুখ্যমন্ত্রীর পা ভাঙার কথা শোনা গিয়েছিল । পায়ে প্লাস্টার লাগিয়ে হুইল চেয়ারে বসে তাকে নির্বাচনী প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল । তবে কিভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পা ভেঙেছিল তা আজও অজানা । এই ঘটনাকে ভোটারদের ‘ইমোশনালি ইম্প্রেস’ করার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পা ভাঙার ‘নাটক’ করার অভিযোগ তুলেছিল বিরোধী দলগুলি । চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী কি ফের একই ‘টেকনিক’ নিচ্ছেন ? এই প্রশ্ন উঠছে এখন ।
উল্লেখ্য,গত বছর ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষায় তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আসছে বলে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আসন ২০১৯ সালের থেকে কোনো হেরফের হবে না বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয় । সমীক্ষায় এটাও বলা হয়েছে যে অযোধ্যায় শ্রীরাম মন্দিরের উদ্বোধনের পর চিত্র অনেক বদলে যেতে পারে এবং বিজেপির আরও আসন বাড়তে পারে । সেক্ষেত্রে দেশ জুড়ে বিজেপির মোট আসন ৪০০ পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয় ।
এদিকে ২২ জানুয়ারী রামমন্দির উদ্বোধনের পরে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশজুড়ে কার্যত ‘শ্রীরাম লহর’ চলছে । বিশেষ করে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে । এরাজ্যেও তার ব্যতিক্রম নয় । নরেন্দ্র মোদীর এই গগনচুম্বী জনপ্রিয়তাকেই বিজেপি বিরোধী দলগুলি ভয় পাচ্ছে । একদিকে একাধিক দুর্নীতি ইস্যু, তার ওপর ‘শ্রীরাম লহর’ ও নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তায় অনেকটাই ব্যাকফুটে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । তাকেই কাউন্টার করার জন্যেই মমতা ব্যানার্জির কথিত দুর্ঘটনাকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা চলছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল ।।
দেখুন ভিডিও 👇