জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বাঁকুড়া,২০ জানুয়ারী :
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে রজত জয়ন্তী, সুবর্ণ জয়ন্তী বা প্লাটিনাম জয়ন্তী একটা আলাদা তাৎপর্য বহন করে আনে। শতবর্ষ হলে সেই তাৎপর্যের মাধুর্য আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে যায়। সেটা যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে উৎসব পরিণত হয় পুনর্মিলন উৎসবে। বয়স অনেক কিছু কেড়ে নিলেও মুহূর্তের জন্য প্রবীণরা ফিরে পান ফেলে আসা বিদ্যালয় জীবনকে। শিশুসুলভ আনন্দে মেতে ওঠেন ওরা। স্মৃতিচারণের সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চিতে লিখে আসা নাম খোঁজার চেষ্টা করেন। ভুলে যান আজ সেই স্থান দখল করেছে ওদের সন্তান-সন্ততি অথবা নাতি- নাতনিরা। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ পরিবেশের সাক্ষী থাকার সুযোগ পায় বর্তমান প্রজন্ম। শতবর্ষের আলোকে সেই সুযোগ পেল বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকের নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা।
শুক্রবার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন ও পুনর্মিলন অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন ‘রামকৃষ্ণ শিবানন্দ আশ্রম কেলাতি’- র প্রতিষ্ঠাতা সচিব স্বামী রাঘব আনন্দী মহারাজ। উপস্থিত ছিলেন খাতড়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশীনাথ মিস্ত্রি, সারেঙ্গা থানার আইসি সুজিত ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট জ্যোতিষী পন্ডিত উজ্জ্বল কান্তি সিদ্ধান্ত শাস্ত্রী, পন্ডিত দীপ্তিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, সারেঙ্গাচক্রের এসআই সোনালি মুর্মু, শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি সত্যকিঙ্কর পন্ডা সহ এলাকার বহু বিশিষ্ট মানুষ।আদিবাসী প্রথায় উপস্থিত অতিথিদের বরণ করা হয়। জানা যাচ্ছে সমস্ত গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানটি আগামী ২১ তারিখ পর্যন্ত চলবে।
আগত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা অনুষ্ঠানের সম্পাদক সাধন কুমার মন্ডল। তিনি বলেন,’এই বিদ্যালয়টি এলাকার গর্ব। তার মর্যাদা বজায় রাখা ও আরও উঁচুতে তুলে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।’
অন্যদিকে মহারাজজী বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ জাগানোর জন্য উপস্থিত অভিভাবকদের কাছে আবেদন করেন।
একই সুর শোনা যায় মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কণ্ঠে। পাশাপাশি তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, অতিরিক্ত মোবাইলে আসক্ত না হওয়া, অপরিচিত কোন মানুষের সাথে চ্যাট ও ভিডিও কল করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার বার্তা দেন। সারেঙ্গা থানার আইসি বলেন,’এই বিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার টান আমাকে বারে বারে এই বিদ্যালয়ে নিয়ে আসে। আশাকরি আগামী দিনেও বিদ্যালয়ের এই সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকবে।’ অনুষ্ঠানের সভাপতি সত্যকিঙ্কর পন্ডা বললেন, ‘আমরা গর্বিত এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়ে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ব্রতচারীসহ সংগীত নৃত্য কবিতা, আবৃত্তি নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। সন্ধ্যায় সারেঙ্গা মিউজিক কলেজের পক্ষ থেকে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এছাড়া একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অঙ্কন, নৃত্য, আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান মঞ্চে আদিবাসী নৃত্য দলের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন সারেঙ্গাচক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সোনালী মুর্মু, শিক্ষা বন্ধু কল্পনা পাত্র, বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রিঙ্কু দাস প্রমুখ।।