এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৬ জানুয়ারী : আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনে না গিয়ে ওইদিন এ রাজ্যের প্রতিটা ব্লকে ‘সংহতি মিছিল’ করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । কলকাতার কালীঘাট থেকে রেড রোড পর্যন্ত মিছিলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে থাকবেন বলে জানিয়েছেন । রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন মমতা ব্যানার্জির এই সংহতি মিছিলকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
আজ মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন,’এটা খুবই উদ্বেগজনক । সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটব্যাংক ওনার কাছ থেকে সরে যাচ্ছে বলে উনি রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন । প্রতিটি ব্লকে ব্লকে সংহতি মিছিলের নামে উনি রামনবমীর মত হিংসে ছড়াতে চাইছেন যাতে মানুষের প্রাণহানি হয় এবং সম্পত্তির ক্ষতি হয় । মানুষের কাছে এটা খুবই উদ্বেগজনক যে পুলিশ মন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখিয়া হয়ে নিজেই রাজ্যে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন ।’
রাজ্যের রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু আবেদন জানান, ‘আমি মহামান্য রাজ্যপালের কাছে অনুরোধ করব যাতে উনি রাজ্যে প্যারা মিলিটারি ফোর্স মোতায়েন করেন । বিশেষ করে রাজ্যের সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’সিএএ এবং এনআরসির নাম করে যেভাবে এরাজ্যের রেলস্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল,সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছিল, সাঁতরাগাছিতে লাইন দিয়ে ৩৭টা বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল । পরবর্তীকালে নুপুর শর্মা ইস্যুতেও যা হয়েছিল, এইসব জায়গায় প্যারামিলিটারি ফোর্স মোতায়েন করা হোক । এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে এটা আমি দাবি করছি ।’
এরপর তিনি মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে বলেন, ‘ওনার হাত থেকে মুসলিম ভোট ব্যাংক চলে গেছে । বালিগঞ্জের উপনির্বাচন, সাগর দিঘির ভোট, সিপিএম ও আইএসএফ-এর কিছু এলাকায় ভালো ফলাফল, বিজিপিরও কিছু মুসলিম এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছে । তাই এখন ভয় দেখিয়ে রাজ্যের ভোট ব্যাঙ্কে সুরক্ষিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ধ্বংসের খেলায় নামতে চাইছেন ।’
শুভেন্দু আরো বলেন,’মনরেগা টাকার দাবিতে রেড রোডে তিনি যে ধরনা দিয়েছিলেন, সেখান থেকে রামনবমীর উস্কানিদাতার যদি কারো নাম বলতে হয়, তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জি । তার উস্কানির কারনে ডালখোলা,রিষরা এবং শিবপুরের পিএম বস্তিতে দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল । তবে শুধু রেড রোডই নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘায় প্রশাসনিক সভাতে তিনি বিশ্বহিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, বজরং দলসহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিকে দাঙ্গাবাজ বলেছিলেন এবং বলেছিলেন আল্লাহতালা, আমার মুসলিম মা ভাই বোনেরা হাতা খুন্তি ঝাঁটা নিয়ে এর প্রতিরোধ করুন । এই ধরনের কণ্ঠস্বর হায়দ্রাবাদের পাকিস্তান প্রেমী নেতা আসাউদ্দিন ওয়েসির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে ।তাই পশ্চিমবঙ্গের শান্তি প্রিয় মানুষকে বলবো সতর্ক থাকুন ।’
পাশাপাশি ফের তিনি রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানান,’পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত সাংবিধানিক বডি রয়েছে তাদের এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্তব্যকে বলবো যারা রাম মন্দিরের উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক ।’
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সন্দেশখালিতে নিজের ‘রোহিঙ্গা বাহিনী’কে ইডির আধিকারিকদের পেটানো তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ শাহজাহানের প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমি প্রতিদিনই একই কথা বলছি, শেখ শাহজাহান মমতা পুলিশের সংরক্ষণে আছে। যদি এই মামলা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে হস্তান্তরিত না হয় এবং কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর এবং বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা নিয়ে যদি অপারেশন না করা হয়, তাহলে শেখ শাহাজাহানকে কখনোই ধরা যাবেনা । শাহজাহান এই মুহূর্তে সরবেরিয়া থেকে ধামাখালির মধ্যে আছেন,খেড়ির মধ্যে আছেন । তিনি এমন জায়গায় আছেন যেখানে রাজ্য পুলিশের সাহায্য ছাড়া কোন তদন্তকারী সংস্থার সেখানে পৌঁছানো সম্ভব নয় ।’ সন্দেশখালি মামলার তদন্তভার সিবিআই বা এনআইএ কে না দিলে শাজাহান অধরা থাকবে বলে মন্তব্য করেন শুভেন্দু অধিকারী ।।