প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ জানুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগণার সন্দেশখালি কাণ্ডের পর থেকে পেরিয়ে গিয়েছে দশ দিন। তবু এখনও অধরা সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান । তাঁর টিকি পর্যন্ত পুলিশ এখনও ছুঁতে পারেনি । তবে পুলিশকে ’ফ্রি হ্যান্ড’ দেওয়া হলে তারা যেকোন অপরাধীকে যে দ্রুত জালে পুরতে পারে সেটাই যেন প্রমাণ করে দিল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ । তাই দেখা গেল এক ব্যবসায়ী অপহৃত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঝাড়খণ্ড থেকে তাকে উদ্ধারের পাশাপাশি পুলিশ ঘটনায় জড়িত তিন দুস্কৃতিকেও পাকড়াও করে ফেলেছে।
জেলার পুলিশ সুপার আমনদ্বীপ জানিয়েছেন,
অপহৃত ব্যবসায়ীর নাম বেণীমাধব ওরফে চন্দন চট্টোপাধ্যায়। তিনি মেমারি শহরের পুরানো পোস্ট অফিস পাড়ার বাসিন্দা । তামাক ব্যবসার টাকার তাগাদার জন্যে রবিবার বিকাল ৪ টে ৩০ মিনিট নাগাদ বেণীমাধব বাইকে চড়ে মেমারি থেকে ছিনুই-এর দিকে যাচ্ছিলেন । পথে ঝাড়খণ্ডের নাম্বার প্লেট লাগানো একটি সাদা রঙের স্করপিও গাড়ি তার পথ আটকায় । ওই গাড়িতে থাকা লোকজন বেণীমাধবকে জোর করে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায় । স্থানীয়দের মাধ্যমে এই খবর পেয়ে ব্যবসায়ীর ভাগ্নে স্বরুপ চট্টোপাধ্যায় ওইদিন মেমারি থানায় অভিযোগ জানান ।
পরিবার সদস্যরা পুলিশকে জানায়,বেণীমাধবকে
অপহরণ করে নিয়ে যাবার পর রাতে ষাট লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা তাদের ফোন করে । তারা বলে,ব্যবসায়ীকে ঝাড়খন্ডে পাকুরের কাছে আটকে রাখা হয়েছে। মুক্তিপণ না পেলে ব্যবসায়ীকে গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে অপহরণকারীরা হুমকি দেয় ।
পুলিশ সুপার বলেন,এমন অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্তকারী দল গঠন করা হয় ।ঝাড়খণ্ড নম্বারের ওই গাড়িটিকে ধরার জন্যে তদন্তকারী দল ঝাড়খণ্ড রওনা দেয় । ফোনের সূত্র ধরে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে পৌছে তদন্তকারী পুলিশ দল অপহৃতকে উদ্ধার করার পাশাপাশি অপহরণের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ।।অপহরণে ব্যবহৃত গাড়িটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । অপহৃত এবং তিন অপহরণকারীকে সোমবার বিকালে ঝাড়খণ্ড থেকে মেমারি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে ,ধৃতদের নাম গোকুল শেখ ওরফে বকুল,আব্দুল আলিম এবং সাহাবুদ্দিন শেখ। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানার ধুলিয়ানে গোকুলের বাড়ি । বাকি দু’জন ঝাড়খণ্ডের পাকুরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে মঙ্গলবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হবেবলে পুলিশ জানিয়েছে।
মেমারি থানার এক পুলিশ কর্তার কথা অনুযায়ী,
ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পরেই
তদন্তকারী পুলিশ দল ঝাড়খণ্ড নম্বারের গাড়িটির খোঁজ পেতে পথে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে থাকে। ঝাড়খণ্ড নম্বারের গাড়িটি যে মুর্শিদাবাদে ঢুকে সেটা মুর্শিদাবাদের সুতির
টোলপ্লাজার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিৎ হয়। গাড়িটি যে ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের দিকে গেছে এবং পাকুরের আশেপাশেই রয়েছে সেটাও
পুলিশ জানতে পারে । তারই মধ্যে রাতে মেমারির তাতারপুর থেকে ব্যবসায়ীর মোটরবাইকটি উদ্ধার হয় । গভীর রাতে তদন্তকারী পুলিশ দল পাকুড় সংলগ্ন মালপাহাড়ি গ্রামের একটি গুদাম ঘরে হানা দিয়ে সেখান থেকে ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে । পরে সেখান থেকেই পুলিশ তিন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে । ব্যবসায়ীকে অপহরণে নেপথ্যে কারবারী গোলযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ জেনেছে,কারবারের একটা বড় রকম টাকা বেশ কয়েকমাস যাবৎ তাগাদা করেও
বেণীমাধবের কাছ থেকে পাচ্ছিল না ধুলিয়ানের ব্যবসায়ীরা। সেই টাকা আদায় করতেই মেমারির ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে পুলিশের
অনুমান করছে ।।