এইদিন ওয়েবডেস্ক,আসানসোল,১৩ জানুয়ারী : বৈদিক শাস্ত্র অনুযায়ী উপনয়নের তিনদিন গৃহবন্দি থাকার পর প্রথম সূর্য দর্শনের দিনে নিজের বাবা-মায়ের কাছ থেকে অন্নগ্রহণ করা যায় না। তখন প্রথম যে দম্পতি ব্রহ্মচারীকে অন্ন দেয়,তাঁরাই তার ‘ভিক্ষাবাবা-মা’ হন । প্রাচীন কালে ‘ভিক্ষাবাবা’র সম্পত্তির উত্তরাধিকার হত ভিক্ষাছেলেরা । সেই নিয়মকে হাতিয়ার করে ভিক্ষা বাবার সম্পূর্ণ সম্পত্তি দাবি করে বসে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের সালানপুর থানা এলাকার পাহাড়গোড়া গ্রামের বাসিন্দা লাল্টু চট্টোপাধ্যায় (৪০) । আর তা নিয়ে বিবাদের জেরেই ভিক্ষাবোন মিঠু রায়কে (৩৪) হত্যার অভিযোগ উঠল তার বিরুদ্ধে ।
জানা গেছে,মৃতা তরুনী মিঠু রায়ের বাবা দামোদর রায় বহু বছর আগে লাল্টু চট্টোপাধ্যায়কে ‘ভিক্ষাছেলে’ করেছিলেন । কিন্তু তখন তিনি কল্পনাও করেননি যে তার একমাত্র মেয়েকে খুন হতে হবে ‘ভিক্ষাছেলে’র হাতেই । পরিবার সূত্রে খবর, লাল্টু সাবালক হওয়ার পর ‘ভিক্ষাবাবা’র সম্পত্তির দেখভালের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেয় । আর তা মেনে নিতে পারেননি মিঠু । তিনি প্রতিবাদ করতেই শুরু হয় অশান্তি ।
এরই মাঝে বৃহস্পতিবার সকালে সালানপুর থানার মাধাইচক-বোলকুন্ডা যাওয়ার রাস্তার পাশেই মিঠুর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । মৃতদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ হয় যে তরুনীকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে । কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে পুলিশের সেই ভুল ভাঙে । পুলিশ জানতে পারে যে তরুনীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হননি ।
এদিকে এই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই খুনের মোটিভ নিয়ে ধন্দ্বে পড়ে যায় পুলিশ । সূত্র খুঁজতে মৃতার মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস খতিয়ে দেখতেই পুলিশ জানতে পারে যে ভিক্ষাদাদা লাল্টু চট্টোপাধ্যায়ের সাথেই সবচেয়ে বেশি কথা বলতেন তিনি । এরপর নিছক সন্দেহের বশে পুলিশ লাল্টুকে আটক করে জেরা করতে শুরু করে । পুলিশের ম্যারাথন জেরায় সে ভেঙে পড়ে এবং খুনের কথা কবুল করে ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে দামোদরবাবু তার সম্পত্তি মেয়ে ও ভিক্ষাছেলের মধ্যে সমান দু’ভাগে ভাগ করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু এটা দু’জনের কেউই তা মেনে নিতে পারেনি । তারা সম্পূর্ণ সম্পত্তির অধিকার দাবি করে আসছিল । এমনকি সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব হাতে থাকার কারনে মিঠু তার সমস্ত খরচখরচা মূলত ভিক্ষাদাদার কাছ থেকেই নিত । পুলিশ সূত্রে খবর, পিকনিকের খরচা চাইতে মঙ্গলবার ভিক্ষাদাদার বাড়িতে গিয়েছিলেন মিঠু । তখন দু’জনের মধ্যে তুমুল বচসা ও হাতাহাতি বাধে । আর তার মাঝেই মিঠুকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর পরে রাস্তার পাশে নির্জন জায়গায় দেহটি ফেলে দিয়ে আসে লাল্টু । মৃতার বাবা দামোদর রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘাতক ভিক্ষাদাদাকে গ্রেফতার করেছে সালানপুর থানার পুলিশ ।।