এইদিন ওয়েবডেস্ক,আউশগ্রাম,১১ জানুয়ারী : পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামে কয়েকদিনের ব্যবধানে পরপর দুটি দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল । প্রথম ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে আউশগ্রামের পলাশ তলার এক গৃহস্থের বাড়িতে । থানার আদূরেই ওই বাড়িটি । দ্বিতীয় ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে ছোড়া কলোনীর বাসিন্দা পুলিশকর্মীর বাড়িতে । দুটি বাড়িতেই একই কায়দায় পরিবারের লোকজনদের হাত-পা মুখ বেঁধে সর্বস্ব নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীদল । প্রথম ডাকাতির ঘটনায় যার দুষ্কৃতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে ধুতদের নাম প্রণব মালিক (২৫), বিজন বিশ্বাস (২৫), অশ্রু বিশ্বাস (২৭) এবং পবিত্র মণ্ডল (৩৩)। ধৃতদের মধ্যে প্রথম তিনজনের বাড়ি কাঁকসা থানার ১১ মাইল এলাকায় । চতুর্থ জন বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী থানার নিত্যানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা । পবিত্রকে আগে পাকড়াও করে পুলিশ । তাকে জেরা করে বাকি তিনজনের নাম জানা যায় । এরপর বুধবার রাতে ১১ মাইল এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে ধরে ফেলে । ধৃতদের আদালতে তোলার পর নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যে পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে তুই তোদের জেরা করে চক্রের বাকি সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে ।
১৭ ডিসেম্বর রাতে আউশগ্রামের পলাশতলা পাড়ার বাসিন্দা অনিলকান্তি দত্তের বাড়িতে ১০-১২ জনের সশস্ত্র দুষ্কৃত দল হানা দিয়েছিল । বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের বেধে রেখে লুটপাট চালায় ওই দুষ্কৃতী দলটি । সোনার গয়না এবং নগদ টাকা পয়সা সহ লক্ষাদিক টাকার সামগ্রী নিয়ে চম্পট দেয় ওই দলটি । পরিবারের তরফে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার তদন্তের নামে পুলিশ । মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমে পবিত্র কে চিহ্নিত করে । এরপর পবিত্র কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পুলিশ বাকি তিনজনের নাম জানতে পারে ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি দুস্কৃতীদলের সঙ্গে ওই চক্রটি যোগ রয়েছে । ঘটনার দিন ১১ মাইল থেকে ৬ জন স্থানীয় দুষ্কৃতী সন্ধ্যা নাগাদ গুসকরা রেলস্টেশনে এসে জড়ো হয়েছিল । তার আগেই উত্তর ২৪ পরগণার ৬ দুস্কৃতী ট্রেন ধরে গুসকরা স্টেশনে এসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল । রেল স্টেশনের ডাকাতের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করার পর তারা একসাথে মাঠে মাঠে হেঁটে আউশগ্রামে আসে । ডাকাতির পর পালানোর সুবিধার জন্য দুটি স্কুটি রেলস্টেশনের কাছে স্ট্যান্ডে রেখে গিয়েছিল তারা । তারপর তারা মাঠের পাশে জঙ্গলের মধ্যে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ওই দলটি হানা দেয় অনিলকান্তিবাবুর বাড়িতে । ডাকাতির পরে আবার তারা মাঠে মাঠেই গুসকরা রেলস্টেশনের দিকে রওনা দেয় । গুসকরা রেলস্টেশনে এসে ১২ জনের দলটি রাতে ঘুমিয়ে নেয় । সকাল হতেই ৬ জন স্থানীয় দুষ্কৃতী স্কুটি চড়ে যে যার বাড়ি চলে যায় । উত্তর ২৪ পরগণার বাকি ছয়জনের দল ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরে যায় ।
পূর্ব বর্ধমানের ওই দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনারায় দুষ্কৃতী দলের পরিচয় কিভাবে হল ?
এই বিষয়ে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে যে উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি মেলাতে গিয়েছিল বর্ধমানের ওই দলটি । সেখানেই ওই দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় । তারপর দুই দল মিলে আলোচনা করে পেশা হিসেবে ডাকাতিকে বেঁছে নেয় । প্রণব, বিজন এবং অশ্রু ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করত । তারা সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে এসে ডাকাত দলে যুক্ত হয় । পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ছোড়া এলাকার পবিত্র । পুলিশের অনুমান যে ওই ডাকাত দলটাই ছোড়া কলোনীর বাসিন্দা পুলিশকর্মীর বাড়িতে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত । বিষয়টি নিশ্চিত হতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ৷ পাশাপাশি বাকি দুষ্কৃতিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ৷।