এইদিন ওয়েবডেস্ক,উত্তর ২৪ পরগণা,১০ জানুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগণার সন্দেশখালির তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা শেখ শাহাজাহান এখন খবরের শিরোনামে । তার বিরুদ্ধে উঠছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ । ইতিপূর্বে সন্দেশখালির এক বিজেপি নেত্রী অভিযোগ করেছিলেন যে হিন্দুদের জমি কেড়ে নিয়ে ‘রোহিঙ্গা কলোনি’ গড়েছেন শাহাজাহান । এবারে আরও একটি চাঞ্চল্যকর দাবি তুললেন সন্দেশখালির বিজেপি নেতা ডক্টর সুকদেব প্রামানিক । একটি ইউটিউব চ্যানেলে তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূল নেতা সেখ শাহজাহানের উদ্দেশ্য দুই বাংলাকে জুড়ে বৃহৎ বাংলাদেশ গড়া ।
সুকদেব প্রামানিক বলেছেন,’ওর শ্বশুর বাড়ি বাংলাদেশে। যার প্রধান উদ্দেশ্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে মিলিয়ে দেওয়া । এখানে একটা মাত্র নদী । ওই নদীর ওপারে বাংলাদেশ,এপারে ভারতবর্ষ । সেই নদীকে মিলিয়ে বাংলাদেশকে বৃহৎ বাংলাদেশ করার চক্রান্তকারীর নাম হচ্ছে শেখ শাহাজান ।’
তিনি বলেন,’শাজাহান গরু পাচার, স্মাগলিং,নারী পাচার, সোনা পাচারে ওরা যুক্ত । যতগুলো ইটভাটা আর ফিশারি আছে সব কটাতে শেয়ার আছে শেখ শাহজাহানের । শুধু তাই নয়, সরবেড়িয়ায় নিজস্ব বাজার রয়েছে তার, ফিশারির মাছ ৫ টাকা কেজি দরে শাহজাহানের বাজারেই বিক্রি করতে হবে। কেউ যদি বিক্রি না করে তাহলে তার ফিসারি তুলে দেওয়া হবে। ওখানে স্বৈরাচারী হিটলার হচ্ছে শেখ শাহাজান ।’ তিনি যোগ করেছেন,’ওরা গণতন্ত্র মানে না। এখানে সেখ শাহজাহান ছাড়া নাকি গাছের পাতা নড়ে না । পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমাকে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ফোন করেছিল । কিন্তু আমি করিনি। সেই কারণে আমাকে বলেছিল যে নাকি মাটিতে পুঁতে দেবে। আমি ডক্টর সুকদেব প্রামানিক চ্যালেঞ্জ করছি, সন্দেশখালিতে নিরপেক্ষভাবে ভোট করলে ওদের জমানত জব্দ হবে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ৫০০ টা ভোটের মধ্যে ৪৮০ টা ভোট আমার পক্ষে পড়েছিল ।’
পাশাপাশি সন্দেশখালীর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন । সুকদেব প্রামানিক বলেন, ‘এখানে থানা বলে কিছু নেই । থানা হয়ে গেছে শাজাহানের বাড়ির দোকানের মত। সন্দেশখালি বা নেজাট থানার ওসি শাহজাহানের বাড়িতে বসে কেস ফাইল করে । শাহজাহান যার বিরুদ্ধে যে কেস করতে বলে তা করতে বাধ্য হয় পুলিশ । তা না হলে ওখানে কেউ থানাতে চাকরি করতে পারবেনা ।’ তিনি বলেন,’শাহজাহানের নিজস্ব চার থেকে পাঁচ হাজার বাহিনী আছে। যারা প্রতি মাসে শাহজাহানের কাছ থেকে মাছ মাইনে পায় । শেখ শাহজাহানের কথায় তারা মানুষ খুন করতে পিছপা হয় না । প্রতিনিয়ত তারা মানুষকে হত্যা করে ।সন্দেশখালিতে ছোট ছোট দ্বীপ আছে । এখানে কোন গণতন্ত্র নেই । শেষ কথা শেখ শাহাজাহান । তার কথা ছাড়া নাকি পাতা নড়ে না । আমার বোনকে যখন প্রার্থী করা হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল এখানে বিজেপির বলে কিছু নেই । এখন তৃণমূলের সময়, তৃণমূল করতে হবে । আবার যখন বিজেপি আসবে আমি বিজেপিতে চলে আসব তখন তোমরা বিজেপিতে এসো । আমি যেটা বলবো সেটাই হবে । এখানে আইনের শাসন চলে না । এখানে শেখ শাহজাহানের শাসন চলে ।’
তিনি বলেন,’ পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের সমানতরালভাবে শাসন চলে শাজাহানের । নাজার থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি । রাজ্যে পুলিশ প্রশাসন থাকলে ই ডি, সি বি আই এর প্রয়োজনই হতো না। মানুষ নিরাপদে থাকত । পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এতটা অসহায় কেন, কারণ কোন শাসন ব্যবস্থা নেই পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্র ভুলুন্ঠিত । অনুব্রতর থেকে শেখ শাহাজাহান অনেক বড় ক্রিমিনাল । অনুব্রত গরুচোর হতে পারে কিন্তু শাহজাহানের মত ক্রিমিনাল নয় ।’
সব শেষে তিনি বলেন,’শাজাহান শেখ হচ্ছে একজন মাফিয়া একজন ক্রিমিনাল । পশ্চিমবঙ্গে যত ক্রিমিনাল আছে সব পরিচালনা করছে কালীঘাটের রানী । পিসিমণি ওদের লালন পালন করছে ।রাজ্যের পতিটা মোড়ে মোড়ে এরকম অনেক শাহজাহান আছে ।’
এদিকে খবর যে সন্দেশখালিকাণ্ডে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক । অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কি কি ধারায় মামলা রজু করা হয়েছে, কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে,তার বিস্তারিত রিপোর্ট দ্রুত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে । রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গত শুক্রবার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহাজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা । পাঁচ জনের ইডির দলেও মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত হন । তাদের কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । ওই ঘটনার পর থেকেই পলাতক শেখ শাহাজাহান । কিন্তু তাকে গ্রেফতারির বিষয়ে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইডি৷ ইডির অভিযোগ ‘লঘু ধারায়’ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে মামলা রজু করেছে রাজ্য পুলিশ ।।