এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৫ মে : ফের দেনার দায়ে হতাশায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক ব্যাবসায়ী । আর স্বামীর মৃত্যুর শোকে লরির সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন ওই ব্যাবসায়ীর স্ত্রী । যদিও অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান । মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার নতুনহাট বাজারে । পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম উৎপল দাস(৩৫) । মঙ্গলবার সকালে মঙ্গলকোটের নতুনহাটে উৎপলবাবুর দোকানঘর থেকে তাঁর দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ । পরে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় । মৃতের স্ত্রী পুতুলদেবী বর্তমানে মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । তাঁর হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে জানা গেছে ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,মঙ্গলকোট থানার ইছাবটগ্রামের বাড়ি উৎপল দাসের । তিনি নতুনহাট বাজারের নামুহাট এলাকায় সাইকেল ভ্যানে বিভিন্ন ফল বিক্রি করতেন । মালপত্র রাখার জন্য নতুনহাট বাজারে তিনি একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন । সারা দিন বিক্রিবাটা করে সন্ধ্যায় বাকি মালপত্র ওই দোকানে ভরে রেখে তিনি বাড়ি ফিরে যেতেন । উৎপলবাবুর বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তান ।
মৃতের স্ত্রী পুতুলদেবী জানিয়েছেন, গতবছর লকডাউনের সময় থেকেই তাঁর স্বামীর ব্যবসায় মন্দা চলছিল । ওই সময়ে পুঁজি ভেঙে তিনি সংসার চালিয়েছিলেন । তারপর বাড়িতে যেটুকু গহনা ছিল সব বন্ধক রেখে ফের ব্যবসা শুরু করেন তাঁর স্বামী । কিন্তু ব্যাবসা শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই আংশিক লকডাউন ঘোষণা হয়ে যায় । ফলে তাঁর স্বামীর ব্যাবসা মার খেতে শুরু করে । অনেক ধারদেনাও হয়ে যায় । এনিয়ে তিনি কিছুদিন ধরে খুব মনমড়া হয়ে পড়েছিলেন ।
একদিকে ব্যাবসায়ে মন্দার জেরে হতাশায় ভুগছিলেন উৎপলবাবু । তার উপর বন্ধক রাখা গহনা ছাড়ানো নিয়ে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা । তার জেরেই ওই ব্যাবসায়ী হতাশায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে দোকান খোলার জন্য যথারীতি নতুনহাটে আসেন উৎপলবাবু । কিন্তু তাঁকে তাঁর সাইকেল ভ্যানে মালপত্র চাপিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায়নি । স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের সন্দেহ হওয়ায় উৎপলবাবুর দোকানে উঁকি দিতেই তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান । পরে খবর পেয়ে দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় মঙ্গলকোট থানার পুলিশ । এদিকে খবর পেয়ে মৃতের স্ত্রী পুতুলদেবী নতুনহাটে আসেন । স্বামীকে ওই অবস্থায় দেখে শোকে মূহ্যমান হয়ে তিনিও একটি চলন্ত লরির সামনে ঝাঁপ দেন । যদিও লরির গতি আস্তে থাকায় চালক জোরে ব্রেক কষার ফলে তাঁর প্রাণ বাঁচে । তবে তাঁর হাতে গুরতর আঘাত লাগে বলে জানা গেছে । স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে ।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার চরঘোষহাটের বাসিন্দা অমিত হুই(৪০) নামে এক মাছের ব্যাবসায়ীর বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল । পরপর লকডাউনের কারনে একদিকে ব্যাবসার মন্দা, সেই সঙ্গে অনেক ধারদেনা হয়ে যাওয়ায় তিনি হতাশায় আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন । তার জের কাটতে না কাটতেই ফের কাটোয়া মহকুমা এলাকার মঙ্গলকোটের এক ফলের ব্যাবসায়ী দেনার দায়ে হতাশায় আত্মঘাতী হলেন । বারবার একই ঘটনা ঘটায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে