এইদিন ওয়েবডেস্ক,মেদিনীপুর,০৭ জানুয়ারী : রাজনৈতিক জমি হারিয়ে ফেলা সিপিএম আজ রাজ্য জুড়ে ‘ইনসাফ যাত্রা’ করছে । কিন্তু এই সিপিএমের রাজত্বকালে আজকের দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিনপুর-১ ব্লকের লালগড় গ্রামপঞ্চায়েতের নেতাই গ্রামের গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা এবং ২৮ জনকে জখম করেছিল সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী । এই ঘটনায় মোট ২০ জন সিপিএম নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করা হয় । প্রথমে সিআইডি তদন্ত শুরু করলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তভার হাতে নেয় । ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল নেতাইকাণ্ডে অভিযুক্ত ডালিম-সহ পাঁচজনকে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল । কিন্তু চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী গণহত্যার মূল তিন অভিযুক্ত ডালিম পাণ্ডে, অনুজ পাণ্ডে ও তপন দে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যায় । ফলে গণহত্যার সুবিচারের আশা কার্যত ছেড়ে দিয়েছেন নেতাই গ্রামের মানুষ ।
তবে রাজ্যে পালা বদলের পর থেকে প্রতি বছর ৭ জানুয়ারী দিনটিকে ‘শহীদ তর্পণ দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছে মেদিনীপুরের মানুষ । আজ নেতাই গনহত্যার ১৩ বছর পূর্তির দিনে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধা জানান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে নিহতদের শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, ‘৭ ই জানুয়ারি ২০০৭ ; বশ্যতা বিরোধী নন্দীগ্রাম ভূমিরক্ষা আন্দোলনের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন । শহীদ তর্পণ দিবস । নেতাই গ্রামে গণহত্যায় নিহত শহিদদের জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।’
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী নেতাই গ্রামের সিপিএমের নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে সিপিএমের হার্মাদবাহিনী গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল । শোনা যায়,সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাম্প করা হয়েছিল রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে । আর তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল গ্রামবাসী । হার্মাদ বাহিনীর বিনা পারিশ্রমিকে রান্ন করে দিতে হত গ্রামের মহিলাদের । এছাড়া তাদের বিভিন্ন ফাইফরমাশ খাটতে হত বলে অভিযোগ । গোটা নেতাই গ্রামে সিপিএমের নেতা রথীন দণ্ডপাটের নেতৃত্বে কার্যত ত্রাসের সৃষ্টি করে রেখেছিল সিপিএমের সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী । আর সিপিএমের দুষ্কৃতী বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম রুখে দাঁড়ান গ্রামের মহিলারাই । ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী গ্রামের মহিলারা সাফ জানিয়ে দেন যে টাটা সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর ফরমায়েস খাটতে পারবেন না । এরপরেই হার্মাদ বাহিনী গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করে । গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম হন ২৮ জন ।
গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে নেতাই গনহত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট । কিন্তু এখনো অব্দি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বই শেষ হয়নি । ১১৫ জনের মধ্যে মাত্র ৭৩ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে । এদিকে অভিযুক্তদের একে একে জামিনও দিয়ে দিচ্ছে আদালত । গত বছরের অগস্টে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্ত হন সিপিএম নেত্রী ফুল্লরা মণ্ডল। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী গণহত্যার মূল তিন অভিযুক্ত ডালিম পাণ্ডে, অনুজ পাণ্ডে ও তপন দে’কে মুক্তি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । এনিয়ে মোট ১০ জন জামিন পেলেন নেতাই গনহত্যা কাণ্ডে । তালিবানি কায়দায় নরসংহার করেও আজও সিপিএম দাবি করে যে তাদের নেতাকর্মীদের নাকি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে । ডালিমরা জামিন পাওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের কাছে এমনই দাবি করেছিলেন সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার ।।