প্রতিদিনের মতো আজও তুই আধ কাপ চা খেয়েই ছুটে বেরিয়ে গেছিস
তোর নিজের কাজে।
আজকেও আমি বলেছি,
একটু আরাম করে বসে
চা টা খেয়ে যা বাবা।
নাহ্ তোর যে সময় নেই!
দোকানের মালিক সময় মতো না গেলে বাজে ভাবে বকবে যে তোকে!
তাই এতো শীতেও সাত সকালে কুয়াশার পথ দিয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে তুই চলে গেলি খোকা!
পেছন থেকে আমি তোর চলে যাওয়া
দেখতে থাকলাম চেয়ে।
মায়ের মন যে !
চোখটা ছলছল হয়ে আসে যখন তখন।
আজ হঠাৎ আমার বুকের ভেতরটা
কেনো যে খা খা করে উঠলো!!
তুই যেনো আমায় “মা” বলে ডাকলি!!
তোর গলার স্বর স্পষ্ট শুনতে পেয়ে ছুটে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।
দরজা খুলতেই কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার ফিরে এলাম ঘরে।
ডান চোখের পাতাটাও লাফিয়ে উঠলো আমার!!
আমার মনে কু’ ডাকলো যেনো!
খুব অস্থির লাগছিল মনটা।
তোর বাবা যেদিন আমায় না বলেই চিরদিনের মতো আমাদের ছেড়ে চলে গেছিল!
সেদিনও যে অমনটাই হয়েছিল আমার!
তোকে বুকে জড়িয়ে বেঁচেছি শুধু।
আজও কেনো এমনটা হচ্ছে বুঝতে পারছি না কিছুতেই !
পিতৃহারা ছেলে আমার তুই।
ভালো খেতে দিতে পারিনি কখনো।
আজ মাছের মুড়ো দিয়ে লাউয়ের ঘণ্ট বানিয়েছি রে খোকা।
তুই যে বড্ড খেতে ভালোবাসিস!
বেলা দশ ‘ টা বাজে তখন।
কোনো কাজেই মন বসছে না আজ।
ছটফট করছে মনটা আমার।
উঠোনে গিয়ে দাঁড়ালাম এবার।
হঠাৎ দেখি ছুটতে ছুটতে পাশের বাড়ির ছেলেটা আসছে এইদিকেই।
বুকটা কেঁপে উঠল আবার অজানা আশঙ্কায়। মাসিমা_ টিংকুদা কে কারা যেনো গুলী করেছে। পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেছে
আমি নির্বাক _ কথাটা শুনে পাথর হয়ে গেছি আমি_
আমার অবোধ ছেলেটাকে কে মারলো?
কাঁদতেও পারছি না আমি।
শূন্য হয়ে গেছি আমি।
আমি কেনো বেঁচে আছি!!
রোজ সকাল সাতটায়,সবার আগেই টিংকু দোকানে পৌঁছে যায়।
সে দোকানের কপাট খুলে সব সামগ্রী সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে।
তার কিছুক্ষন পর দোকানের মালিক আসে।
সেদিন,…
দোকানের দরজাটা যেই খুলেছে সে,
অমনিতেই আচমকা পেছন থেকে একটা গুলি এসে তার পিঠ ফুটো করে দিল।
আততায়ীর দল রাস্তায় মিলিয়ে গেল।
মা…. বলে লুটিয়ে পড়ল সে_ কুড়ি বছরের এক দরিদ্র মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তানের রক্তাক্ত দেহ আরেক মায়ের কোলে লুটিয়ে পড়ল __
আমি বোধহয় জ্ঞান হারিয়েছিলাম।
যখন চোখ খুললাম তখন দেখি,
সাদা চাদরে ঢাকা তোর দেহটা আমার সামনে __
কী শান্তিতে তুই ঘুমাচ্ছিলি তুই খোকা!!
আমার জীবনটা সাদা ফ্যাকাসে হতে হতে আকাশের মেঘের রঙে মিলে মিশে
এক হয়ে গেলো রে খোকা!!
তোকে জড়িয়ে ধরে থাকি এখনও।
আমার প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস
তোর নাম ধরে আর্তনাদ করে_
তোর কাছেই যেতে চাই।
তোকে কাছে পেতে চাই খোকা!!
খোকা..…!!! আমি এসে গেছি …
এই তো তোর মা!!!