জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হুগলি,০৪ জানুয়ারী : বাড়ির ছোট মেয়ে । নিজের জন্মদিনটা চারদেওয়ালের মধ্যে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের উপস্থিতিতে আনন্দ মুখরিত পরিবেশে পালন করতেই পারত। কিন্তু গত বছর তিনেক ধরে সম্পূর্ণ অন্যভাবে নিজের জন্মদিন পালন করে চলেছে হুগলির হরিপালের তরুণী পেশায় গৃহশিক্ষিকা ঋতুপর্ণা দাস। আজ বৃহস্পতিবার
জানুয়ারী নিজের জন্মদিনে সাত সকালে মা-বাবার আশীর্বাদ নিয়ে ঋতুপর্ণা গৃহশিক্ষকতা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ছ’টি কম্বল কিনে হাজির হয়ে যায় স্থানীয় ছ’টি অসহায় দুস্থ পরিবারের দরজায়। এই প্রবল ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য ঐসব পরিবারের সদস্যদের কম্বল কেনার মত আর্থিক সামর্থ্য ছিলনা। তখন ঋতু পাশে পেয়ে যায় হরিপালের ‘এসো বন্ধু হই’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কয়েকজন সদস্যকে। তারপর কম্বলগুলি তুলে দেয় ঐসব অসহায় পরিবারের সদস্যদের হাতে। তাদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সংশ্লিষ্ট মানুষদের আশীর্বাদ চেয়ে নেয়। প্রথমে কুণ্ঠিত হলেও মিষ্টি মেয়ের ব্যবহারে আপ্লুত মানুষগুলি তার মাথায় হাত রেখে তাকে আশীর্বাদ করেন। নিজের খুশীর দিনের আনন্দ সে এইভাবেই ভাগ করে নেয় এইসব পরিবারগুলোর সদস্যদের সাথে।
প্রসঙ্গত, রসায়ন বিদ্যায় স্নাতক ঋতুপর্ণা বাড়ির ছোট মেয়ে। বাবার একটি ছোট্ট রেস্টুরেন্ট আছে। ওটাই তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। দুই দিদির বিয়ের পর সকাল-বিকাল গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যাবেলায় রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাবার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে চলে বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি।
ঋতুপর্ণা বলল,কষ্টটা কী সেটা ছোট থেকেই উপলব্ধি করেছি। মনের মধ্যে ইচ্ছে ছিল যদি কোনোদিন উপার্জন করতে পারি তার একটা অংশ গরীবদের জন্য ব্যয় করব। আজ গৃহশিক্ষকতা করে যেটুকু উপার্জন করি তার থেকে নিজের সাধ্যমতো ওদের জন্য ব্যয় করি। বিনিময়ে পাই আশীর্বাদ। যেকোনো পার্থিব উপহারের থেকে এটা অনেক বেশি মূল্যবান।’
ঋতুপর্ণার মানবিকতার ভূয়সী প্রশংসা করে ‘এসো বন্ধু হই’ সংস্থার অন্যতম সদস্য অন্বয় দে বললেন – বাচ্চা মেয়েটা যে উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছে তারজন্য কোনো প্রশংসা যথেষ্ট নয়। এলাকায় এরকম একজন মেয়েকে পেয়ে আমরা গর্বিত। অসহায় মানুষের পাশে থাকার জন্য তিনি এলাকার সহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে আবেদন করেন।।